ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

নির্বাচন সামাল দিতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা অপরিহার্য: সিইসি

আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫২ এএম

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন, জাতীয়ভাবে করতে হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা শুধু নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একার পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য গণমাধ্যম, জনগণ এবং রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতা অপরিহার্য। সোমবার (০৬ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে সকালে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি এবং দুপুরে পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দু’দফায় প্রায় ৫০ জনের মতো গণমাধ্যম প্রতিনিধি সংলাপে অংশ নেন।

সিইসি বলেন, ‘এই নির্বাচন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তাই একটি ভালো নির্বাচন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। ২০২৪ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় ২১ লাখ মৃত ভোটার চিহ্নিত করে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রায় ৪৫ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে, নারী ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ বাড়াতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হয়েছে, ফলস্বরূপ বিপুল সংখ্যক নারী নিবন্ধন করেছেন।’

নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য কাজ করছে জানিয়ে সিইসি বলেন, পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করার পর পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। এটি একটি শংকর পদ্ধতি, যা ডিজিটাল ও পোস্টাল ব্যালটের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে।

সিইসি গণমাধ্যমের ভূমিকার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে বলেন, যত চেষ্টাই আমরা করি না কেন, মিডিয়া, জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম জনমত গঠন এবং সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে সহায়ক। তিনি একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন দেখতে চান এবং এজন্য ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমের সহায়তা কামনা করেন, যাতে তারা ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেন।

ভোটের পথে নিজেদের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে সিইসি জানান, অংশীজনের আলোচনা শেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। সংস্কার কমিশন অনেক কাজ এগিয়ে নেওয়ায় হালকাবোধ করছে ইসি। তিনি বলেন, ‘জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। এ সংলাপ কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়, মূল্যবান পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আপনাদের পরামর্শ মূল্যায়ন করতে চাই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে আপনাদের সহযোগিতা চাই।’

এএএম নাসির উদ্দিন বলেন, ইসির একার পক্ষে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সম্ভব নয়। গণমাধ্যমসহ আইনশৃঙ্খলা, দল, প্রার্থী, ভোটার, জনগণসহ সবার সহায়তা লাগবে। অপতথ্য, মিথ্য তথ্য রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা লাগবে। তিনি বলেন, আমাদের লুকানোর কিছু নেই। দেশ ও বিশ্বকে দেখাতে চাই স্বচ্ছ নির্বাচন। স্বচ্ছভাবে আয়নার মতো পরিষ্কার নির্বাচনটা করতে চাই। আমাদের সাফ কথা, গণমাধ্যমের সহযোগিতা লাগবে। স্বচ্ছ পদ্ধতিতে কাজটা সারতে চাই। ভোটারদের জন্য কিছুদিনের মধ্যে সচেতনতা প্রোগ্রাম শুরু করবো।

সিইসি বলেন, আমরা সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করতে চাই, এটা কোনো কথার কথা নয়। এক্ষেত্রে আমরা মিডিয়াকে পার্টনার হিসেবে পেতে চাই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এ সংলাপ শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়। আপনাদের মতামত নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিতে আপনাদের সহযোগিতা লাগবে।

এদিকে সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের নির্বাচন যদি খারাপ হয়ে থাকে অতীতে সেটা কালেক্টিভ ডিসঅর্ডার। আমরা সবাই মিলে খারাপ করেছি। আর সামনে যদি আমাদের নির্বাচন ভালো করতে হয়, সেটা কালেক্টিভলি আমাদের ভালো করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ আমরা সবাই ভাবমূর্তি সংকটে আছি। সেটা নির্বাচন কমিশন বলি, পুলিশ বলি, প্রশাসন বলি, মিডিয়া বলি- আমরা প্রত্যেকে সবাই ভাবমূর্তি সংকটে আছি।’

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘এই আস্থার সংকটটা কাটিয়ে ওঠাই আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই নির্বাচন কমিশনের জন্য খুব ভালো হতো যদি আমরা মান ধরে রাখার কাজটা করতে পারতাম। আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে আমাদের রিভার্স করতে হচ্ছে সবকিছু।’

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে ডিসইনফরমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ 

নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, এই যখন বৈশ্বিক বাস্তবতা, আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ অনেক। আমরা বুঝতেই পারছি। মিসইনফরমেশন ডিসইনফরমেশন যত বেশি ছড়াচ্ছে মানুষের মাঝেও কিন্তু সন্দেহ প্রবণতা তত বাড়ছে। যদিও বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে এটার প্রভাব এখনো অনেক বেশি আছে। আর প্রভাব আরেকটা কারণ হচ্ছে প্রিভিয়াস পজিশন ও কনফরমেশন বায়াস। যখন আমার পক্ষে যাচ্ছে তথ্যটা সত্য হোক, মিথ্যা হোক আমি নিয়ে এটা সাথে সাথে পোস্ট করে দিচ্ছি। আর যখন আমার বিপক্ষে যাচ্ছি তখন আমি এটার বিরুদ্ধে একটা নোংরা কথা লিখছি। এটা কেমন যেন একটা বিহেভিয়ারাল ড্যামেজ হয়ে গেছে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে। তো ইনশাল্লাহ আমরা যে পদ্ধতিটা নিতে যাচ্ছি সংক্ষেপে সেটা বললাম। আমরা ওপেন অ্যান্ডেড রাখবো। আমরা কোনো লিমিট করবো না।

মঙ্গলবারের সংলাপে নারীনেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার কথা রয়েছে। এরপর জুলাই যোদ্ধা, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও বসবে ইসি। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভোটের সংলাপ শুরু করে ইসি। ওইদিন সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজের সঞ্চালনায় সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির কর্মকর্তারা অংশ নেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে সোমবার (০৬ অক্টোবর) টেলিভিশিন, পত্রিকা ও অনলাইন গণমাধ্যমের সম্পাদক, প্রধান বার্তা সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।

MMS
আরও পড়ুন