ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলে পরিবর্তনের বার্তা

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩০ পিএম

ফ্যাসিস্ট মুক্ত নতুন বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। দেশবাসী দেখলো ঢাবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। বিভিন্ন কৌশলে যারা নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করেছেন প্রথমেই তাদের জন্য শুভেচ্ছা। প্রত্যাশায় নতুন নেতৃত্বের আলোয় আরও উজ্জ্বল হোক প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঐতিহাসিক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 

অন্য সব নির্বাচনের মতো এবারের ডাকসু নির্বাচনেও বিভিন্ন প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দেখা গেছে পক্ষে-বিপক্ষে। সেসবের সত্যতা অজানাই রয়ে গেলো। তবে আশ্চর্যের বিষয় হয়ে দাঁড়ালো বিশাল ব্যবধানে ছাত্রদলের পরাজয়। এছাড়াও অন্যান্য প্রার্থীরা সেখানে দাঁড়াতেই পারলো না। বিভিন্ন পদে প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা দেখে আপন অজান্তে কিছু সহজ প্রশ্নের উদয় হতে পারে যে কারও মনে। 

  • এমন বিজয়ের নেপথ্যের করণ কি❓
  • দীর্ঘদিন ছদ্মবেশে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা নেতাদের আকস্মিক ব্যাপক জনপ্রিয়তার রহস্য কি❓
  • বিজয়ীরা যে কৌশলে বিজয় ছিনিয়ে নিলো, সেই কৌশল অন্যরা কেন এড়িয়ে গেলেন❓
  • আবিদ, উমামা ফাতেমা, মেঘমল্লার বসুরা আসলে কোথায় আটকে গেলেন❓
  • ডাকসু নির্বাচনে অভিনব কোনো কারচুপি হয়নি তো❓
  • এই পরাজয় কি শুধু ঢাবি ছাত্রদলের❓
  • ছাত্রদলের পরাজয়ে কী সাংগঠনিক দুর্বলতা নেই❓

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন নয় হয়ত। কেবল সাধারণ মানুষের সারিতে দাঁড়িয়ে মনে হয় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আবশ্যক। ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর সমস্ত কিছুই প্রবহমান। তাই বস্তাপচা পুরোনোকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলার সময় এখনই। ৯০ দশকের সিনেমা দেখতে এখন কেউ সিনেপ্লেক্সে গিয়ে টিকিট কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবে না নিশ্চয়ই। নতুন বাংলাদেশে হাসিনা অধ্যায়ের ক্যাডার পলিটিক্স বা পেশিশক্তির প্রভাব বাদ দিয়ে জনবান্ধব সোশ্যাল পলিটিক্সের কোনো বিকল্প নেই। 

কথাগুলো এখানে এই কারণেই আসলো- হাসিনা সরকারের পতনের পর ধসে পড়ে তার দীর্ঘ সময়ের রাজত্ব। দেশ জুড়ে অবাধে লুটপাট হয় সমস্ত সেক্টরে। কাজটা সবাই (রাজনৈতিক দল) করেছে কম-বেশি। কেউ সজোরে আর কেউ নিঃশব্দে। পার্থক্য এখানেই। যার শরীর বড়ো তার নড়াচড়ায় শব্দ বেশি হওয়াটাই বাস্তবতা।

একটা গোষ্ঠী নীরবে অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো নিজেদের দখলে নিয়েছে নিভৃতে। আর তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করছে কারা চাঁদাবাজি করছে, সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে, কে ভারতের প্রেমে মজেছে ইত্যাদি। বিভিন্ন মিডিয়ায় মুখরোচক আলাপে তারা নিজেদের তুলে ধরেছে নতুন আঙ্গিকে-নবরূপে। ফলে তাদের আসল রূপটা পর্দার ওপারেই রয়ে গেছে। এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখলে সাংগঠনিক কৌশল বলা যাবে হয়ত। এর পরেও কিছু থাকতে পারে যা এখন অদৃশ্য।

এদিকে জুলাই আন্দোলনে কারফিউ ভেঙে তপ্ত রাজপথে থাকা বামেরাও সম্প্রতি খুব ব্যস্ত। সংবিধান, জাতীয় সংগীত, পতাকা, ৭১, নারীর প্রকাশ্যে ধূমপানের অধিকারসহ ইত্যাদি রক্ষার সংগ্রামে তাদের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। হাসিনার কূটনৈতিক প্রেসক্রিপশনের ওষুধ সেবনে অসুস্থ বামদের চর্চায় নিয়ে আসাও এদের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। স্বৈরশাসক হাসিনার পুঁতে রাখা বিভাজনের বীজ এখন গাছ হয়ে ডালপালা ছড়াচ্ছে বামদের ঘরে ঘরে। দোসর ট্যাগ দিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে কাঁদা ছোড়াছুড়ির দারুণ একটা বাম সিনেমা ইতোমধ্যে দেখেছে বাংলাদেশ। 

আবার সামান্য অর্থ ও সাময়িক সুবিধার লোভে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতারা ছেঁচরামো করে নিজ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। অপরিপক্ব নেতৃত্ব আর অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ডে নয়া ফ্যাসিস্টের ট্যাগ নিচ্ছেন অজান্তেই। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে তারা নিজ ঘরে হানাহানি করছেন ভাইয়ে ভাইয়ে। এতে ব্যক্তির তুলনায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দল। আর এসব সংঘটিত হচ্ছে কেবল সাংগঠনিক শিক্ষার অভাবে। ফলে ভরসা হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

আমার কথাগুলো ভুল হলে, স্বাধীনতার প্রায় ৫৪ বছর পরেও আজ ঢাবিতে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিজয় দেখতে হতো না। এটা মূলত লজ্জার কিনা জানি না। তবে স্পষ্টতই ডাকসুর বিজয়ীরা সংগঠিত পক্ষান্তরে পরাজিতরা বিচ্ছিন্ন। সবাই প্রত্যাশিত সংগঠন চর্চায় ব্রতী হলে আজকের ডাকসুর চিত্র হয়ত ভিন্নরকম হতো।

জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন সামনে রেখে নতুন বার্তা এসেছে রাজনৈতিক দল ও দলগুলোর নেতাদের জন্য। কেউ সংগঠন করেন কিন্তু সংগঠনের সাংগঠনিক লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শ সম্পর্কে জানেন না, এটা লজ্জার। দলের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজে লাভবান হওয়ার চেষ্টা নিতান্ত মূর্খতা। তাই সময় এসেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে জনসম্পৃক্ত কাজে মনোনিবেশ করার। নিজেকে হাতি বা খরগোশ মনে করে পিঁপড়ে কিংবা কচ্ছপকে মূল্যহীন ভাবার সুযোগ নেই। যারা বিগত ১৬ বছর আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিল, তাদের সম্ভাব্য প্রাপ্তি যেন কোন মুখোশধারী অভিনেতাদের গোলায় না উঠে।

SN
আরও পড়ুন