সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ রাখতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটির বক্তব্য, বহুত্ববাদ শব্দটি আল্লাহর একত্ববাদের বিপরীত শব্দ। তবে শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বহুমত’ বা ‘বহুপথ’ রাখার প্রস্তাব করেছে দলটি।
ঐকমত্য কমিশনের দেয়া ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ১৫টিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দ্বিমত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে জাতীয় সংসদের এলডি হলে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। শেষ হয় বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে। বিষয়টিতে দলটির দ্বিমত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জালাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা বহুত্ববাদের বিরোধিতা করেছি। কারণ, শব্দটি একত্ববাদের বিপরীত শব্দ বা প্রতিশব্দ। এর মাধ্যমে আল্লাহ যে এক, এটার বিরোধিতা বোঝা যায়। তাই এটি বাদ দেওয়ার জন্য জোর প্রস্তাব করেছি।’ সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখার বিধান পুনর্বহালের দাবি করেছেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশকে চার প্রদেশে ভাগ করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে জানিয়ে দলটি মহাসচিব বলেন, ভৌগোলিক আকারে বাংলাদেশ ছোট দেশ। চারটি প্রদেশে ভাগ করতে গেলে রাষ্ট্রের খরচ বেড়ে যাবে। তাই এ ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছি।
সরাসরি নয়, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। বিষয়টিতে দ্বিমত করেছে খেলাফত মজলিস। মহাসচিব জালাল আহমেদ বলেন, ‘ইউপি সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটবে না। আমরা বলেছি, জনগণের প্রত্যক্ষ সরাসরি ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। সেটা ইউপি বা উপজেলা পরিষদে।’ ইউপি সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে টাকার ছড়াছড়ি হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট কথা হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোষীদের বিচার করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। এ মুহূর্তে দ্রুত নির্বাচন করতে গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পুলিশ প্রশাসনের বর্তমানে সক্ষমতা এখনো হয়ে ওঠেনি।’
দ্বিমত করা বিষয়গুলোতে আলোচনার মাধ্যমে একমত হয়েছেন কি না, জানতে চাইলে জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দ্বিমত হওয়া বিষয়ে একমত হই নাই। তবে উপজেলা পর্যায়ের নাগরিক কমিটিতে শিক্ষার্থী রাখার প্রস্তাবে আংশিকভাবে একমত হয়েছি। কারণ, আমরা মনে করি, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকলে লেখাপড়া ব্যাঘাত ঘটবে। তবে কমিশন বলেছে, শিক্ষার্থীরা যাতে জনকল্যাণ কাজ করতে শেখে, পুনর্বিবেচনা করুক। তখন বলেছি, থাকতে পারে।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, সংবিধানের মূলনীতি থেকে বহুত্ববাদ বাদ দেবার প্রস্তাব করে ‘আল্লাহর ওপর বিশ্বাস’ কথাটি সংবিধানে পুনর্বহাল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে আমাদের পক্ষ থেকে৷ এছাড়া ৪টি প্রাদেশিক প্রদেশ গঠনের বিরোধিতা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়ে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সর্বত্র জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা৷ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোষীদের বিচার এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের সরকারি পদক্ষেপ দৃশ্যমান হওয়ার পর নির্বাচনে মত দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা