ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে মানুষের জীবনে দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা ও হতাশা বারবার ফিরে আসে। ইসলাম আমাদের এই অস্থিরতার মূল চিকিৎসা হিসেবে একটি গভীর আধ্যাত্মিক গুণের আমল শেখায়, তাহলো—রিদা, অর্থাৎ আল্লাহর তাকদির ও ফয়সালার প্রতি হৃদয় থেকে সন্তুষ্ট থাকা। যে হৃদয় তাকদিরে সন্তুষ্ট, সে হৃদয়ে দুশ্চিন্তা স্থায়ী হয় না।
তাকদিরে সন্তুষ্টি (রিদা) কী?
রিদা হলো—
> আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন, তা খুশি মনে গ্রহণ করা,
> বিপদে অভিযোগ না করা,
> নিয়ামতে অহংকার না করা।
এটি মুমিনের অন্যতম আমল ও ইমানের উচ্চস্তরের একটি গুণ।
কুরআনের আলোকে তাকদিরে সন্তুষ্টি
১. সব কিছু আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত
যে ব্যক্তি জানে যে, সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায়, সে অকারণে দুশ্চিন্তায় ভোগে না। আল্লাহ তাআলা বলেন— ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আসে না।’ (সুরা আত-তাগাবুন: আয়াত ১১)
২. তাকদিরে বিশ্বাস হৃদয়কে হেদায়েত দেয়
আল্লাহ তাআলা বলেন—‘যে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে হেদায়েত দেন।’ (সুরা আত-তাগাবুন: আয়াত ১১)
হজরত ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এ আয়াত সেই ব্যক্তির ব্যাপারে, যে বিপদে পড়ে জানে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই।’
৩. দুশ্চিন্তা মুক্ত জীবনের সূত্র
তাকদিরে সন্তুষ্ট মানুষ না অতীত নিয়ে কাঁদে, না ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাঙে। আল্লাহ তাআলা বলেন—‘যেন তোমরা যা হারিয়েছ তার জন্য দুঃখ না করো এবং যা পেয়েছ তার জন্য অহংকার না করো।’ (সুরা আল-হাদিদ: আয়াত ২৩)
৪. মুমিনের জীবনই কল্যাণ
মুমিন তাকদিরে সন্তুষ্ট থাকে তাই মুমিনের জীবনই কল্যাণ। হাদিসে পাকে এসেছে—‘মুমিনের অবস্থা ভারি অদ্ভুত। তার সমস্ত কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কারো জন্য এ কল্যাণ লাভের ব্যাবস্থা নেই। তারা আনন্দ (সুখ শান্তি) লাভ করলে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়, আর দুঃখকষ্টে আক্রান্ত হলে ধৈর্যধারণ করে, এও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’ (মুসলিম ৭২২৯)
৫. তাকদিরে সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি
‘বিপদ যত মারাত্মক হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। আল্লাহ তাআলা যখন কোনো জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদেরকে (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য (আল্লাহ তাআলার) সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে লোক তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহ তাআলার) অসন্তুষ্টি বিদ্যমান। (তিরমিজি ২৩৯৬)
৬. দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির মূলনীতি
‘যদি’ শব্দই দুশ্চিন্তার দরজা খুলে দেয়। হাদিসে এসেছে—‘শক্তিশালী মুমিন দুর্বলের তুলনায় আল্লাহর কাছে উত্তম ও অধিক প্রিয়। প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে, যাতে তোমার উপরকার হবে তার প্রতি তুমি লালায়িত হয়ো এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর এবং অক্ষম হয়ে থেকো না। যদি কোন কিছু (বিপদ) তোমার উপর আপতিত হয় তবে এরূপ বলবে না যে, যদি আমি এরূপ করতাম তবে এরূপ এরূপ হত। বরং এই বল যে, আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কেননা, তোমার لَوْ (যদি) শব্দটি শয়তানের আমলের দুয়ার খুলে দেয়।’ (মুসলিম ৬৫৩২)
কেন তাকদিরে সন্তুষ্টি দুশ্চিন্তার দরজা বন্ধ করে দেয়?
> অতীত নিয়ে আফসোস কমে
> ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় দূর হয়
> আল্লাহর ওপর ভরসা দৃঢ় হয়
> অন্তরে প্রশান্তি নেমে আসে
> দোয়া ও ইবাদতে মন বসে
বাস্তব জীবনে তাকদিরে সন্তুষ্ট হওয়ার আমল
> قَدَّرَ اللَّهُ وَمَا شَاءَ فَعَلَ — ‘ক্বদ্দারাল্লাহু ওয়া মা শাআ ফাআলা’ বেশি বেশি বলা।
> বিপদে অভিযোগ নয়, দোয়া করা
> নিয়ামতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
> সব অবস্থায় সালাতের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় রাখা
তাকদিরে সন্তুষ্টি কোনো দুর্বলতা নয়, বরং শক্তিশালী ইমানের পরিচয়। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে—আল্লাহ যা করেন, তা কল্যাণের জন্যই করেন— তার অন্তরে দুশ্চিন্তার জায়গা থাকে না। তাই সত্যিই বলা যায়— ‘তাকদিরে সন্তুষ্টি দুশ্চিন্তার সব দরজা বন্ধ করে দেয়।’
জান্নাত লাভের সহজ আমল