ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সান্তা ক্লজের পোশাক কেন লাল-সাদা?

সান্তার পোশাকের স্টাইলের উৎস খুঁজে পাওয়া জটিল, কারণ তার অনেক অনুরূপ চরিত্র রয়েছে বিশ্বজুড়ে, যারা একত্রিত হয়ে আজকের সান্তার চেহারায় পরিণত হয়েছে। তার টুপি একসময় প্রাচীন ফ্রিজিয়ান ক্যাপ, ফেল্ট পাইলিয়াস এবং পোপের পোশাকসহ অনেক কিছু থেকে এসেছে। তবে এখন এটি তার একান্ত বৈশিষ্ট্য।

আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম

লাল রঙের পোশাক, চোঙা আকৃতির লম্বা টুপি পরা লম্বা সাদা চুল-দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ লোক। হরিণ টানা স্লেজে চড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের উপহার পৌঁছে দেন যিনি। তার নামই সান্তা ক্লজ। খবর রয়টার্স’র।

বিশ্বজুড়ে শিশুদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া সান্তা ক্লজের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু তার লাল-সাদা পোশাক পরার প্রচলন কীভাবে হল তা অনেকে জানেন না।

সান্তা সবসময় লাল পোশাক পরতেন না। আসলে, পোশাক, চেহারা এবং উচ্চতা মিলিয়ে আজকের যে পরিচিত সান্তাকে আমরা চিনি, সেটি তৈরি হতে প্রায় এক শতক সময় লেগেছে।

লাল ভেলভেটের স্যুট, সাদা ফার (পশম), উঁচু কালো বুট, আর পম-পম টুপি–হ এটাই সান্তা ক্লজের পরিচিত পোশাক। এর কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে, যেমন "দ্য সান্তা ক্লজ" সিনেমায় টিম অ্যালেনের পোশাক বা "মিন গার্লস" সিনেমায় ব্যবহৃত স্প্যাগেটি-স্ট্র্যাপ পোশাক। তবে সান্তা ক্লজের পোশাক বিশ্বব্যাপী খুব পরিচিত এবং অনেক পুরোনো।

সান্তা বাস্তবে না থাকলেও, মার্কিন শপিং মলের সান্তাদের পোশাকের কিছু নিয়ম আছে। যেমন, ব্লুমিংডেলসে এক সান্তা যদি সবুজ স্যুট পরেন, সেটা খবরের শিরোনাম হয়ে যায়। এক মা বলেছিলেন, ‘সবকিছুই পরিবর্তন করতে হবে না... সবুজ সান্তা পাগলামি। এটা ঠিক না।’

তার পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিলেন খ্রিষ্টান পুরোহিত সেন্ট নিকোলাস এবং তার ডাচ সমকক্ষ সেন্টারক্লাউস; ফরাসি পিতামহ পের নোয়েল এবং জার্মান উপহার দেওয়া শিশু যিশু, ক্রিস্টকিন্ডলসহ  (যেটি, আমেরিকায়, ভুল উচ্চারণে 'ক্রিস ক্রিঙ্গল' নামে পরিচিত) আরো অনেকেই।

তবে আমেরিকান সান্তা প্রথমবারে ১৮২০-এর দশকে তৈরি হতে শুরু করে এবং কবিতা, সম্পাদকীয় ইলাস্ট্রেশন এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এটি বিকশিত হতে থাকে।

 

সান্তার মূল বৈশিষ্ট্য– দাঁড়ি এবং পশম পরা এক ব্যক্তি, যাকে রেইনডিয়ারের টানা স্লেজে বসানো হয়, ১৮২৩ সালের ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুরের কবিতা "অ্যা ভিজিট ফ্রম সেন্ট নিকোলাস" (যা "'টওয়াজ দ্য নাইট বিফোর ক্রিসমাস" নামেও পরিচিত) এবং ১৮২১ সালের একটি কম পরিচিত অজ্ঞাত কবিতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে তাকে "সান্তেক্লজ" বলা হয়েছিল। তবে তিনি (সান্তা) যা পরতেন, তা ছিল ব্যাখ্যা করার বিষয়।

"সান্তা ক্লজ: আ বায়োগ্রাফি" বইয়ের লেখক ইতিহাসবিদ গেরি বাওলার বলেন, "১৯ শতক ছিল সেই সময়, যখন সান্তা দেখতে কেমন এবং কী পরিধান করা উচিত, এ নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল।" তিনি এক ফোন সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, "আমেরিকান শিল্পীদের সান্তার পোশাক নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রায় ৮০ বছর লেগেছিল। ওই সময়ের আগে সান্তাকে যে কোনো রঙের পোশাক এবং নানা ধরনের আলখেল্লায় দেখা যেত।"

মুরের লেখায় সান্তাকে কখনো ছোট, চতুর এলফের মতো দেখানো হয়েছে, যে চিমনি দিয়ে ঢুকতে পারে। ১৮৬৪ সালে একটি ছবিতে সেন্ট নিকোলাসকে হলুদ স্যুট ও পশমের টুপি পরা অবস্থায় দেখানো হয়েছে।

 

১৮৩৭ সালের একটি তৈল চিত্রে তাকে লাল পশমি ম্যান্টলে দেখা যায়। ১৮৫০ সালের একটি বিজ্ঞাপনে সান্তাকে বিপ্লবী যুদ্ধের একজন ব্যক্তির মতো দাড়িহীন দেখানো হয়। ১৯০২ সালে এল. ফ্রাঙ্ক বমের বইয়ের প্রচ্ছদে তাকে পশমি ট্রিম ও লাল বুট পরা পোশাকে দেখা যায়।

হার্পারস উইকলির কার্টুনিস্ট থমাস ন্যাস্টডেমোক্র্যাটদের জন্য গাধা এবং রিপাবলিকানদের জন্য হাতি আঁকেন। তিনি ১৮৬৩ সালে সিভিল ওয়ারের (গৃহযুদ্ধ) সময় সান্তাকে প্রথম আঁকেন, যেখানে তিনি সেনাদের উপহার দিচ্ছিলেন। 

তবে, ১৮৮১ সালে তার আঁকা সান্তার চিত্রই সবচেয়ে জনপ্রিয়। ওই সময় সান্তা লাল স্যুট পরেছিলেন, যা আজকের সান্তার মতো। এরপর নরম্যান রকওয়েল এবং জে. সি. লেইন্ডেকার সান্তাকে তার পরিচিত লাল স্যুটে আঁকেন।

তবে সান্তার পোশাকের স্টাইলের উৎস খুঁজে পাওয়া জটিল, কারণ তার অনেক অনুরূপ চরিত্র রয়েছে বিশ্বজুড়ে, যারা একত্রিত হয়ে আজকের সান্তার চেহারায় পরিণত হয়েছে। তার টুপি একসময় প্রাচীন ফ্রিজিয়ান ক্যাপ, ফেল্ট পাইলিয়াস এবং পোপের পোশাকসহ অনেক কিছু থেকে এসেছে। তবে এখন এটি তার একান্ত বৈশিষ্ট্য।

এতকিছুর পরেও সান্তার পোশাকের ইতিহাস খুব বিস্তৃত ছিল। ভবিষ্যতে হয়ত তার পোশাক আবার একটু বিস্তৃত হতে পারে। তবে বড়দিনের ঐতিহ্যবাদীরা তাতে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না।

NC
আরও পড়ুন