ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ধীরস্থিরভাবে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব

আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪০ পিএম

নামাজ ইসলামের অন্যতম মূল স্তম্ভ। কিন্তু অনেকেই শুধু সময়মতো নামাজ আদায় করলেই দায়িত্ব শেষ মনে করেন। কিন্তু নামাজের ভেতরের গভীরতা, স্থিরতা ও আন্তরিকতা কতটা গুরুত্ব রাখে, সেটিই স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন নবীজি  হয়রত মুহাম্মদ (সা.)।   

আবু হোরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন এক সাহাবি নামাজ শেষ করে এসে সালাম দিলেন। 

নবীজি  (সা.) তাকে জবাব দিয়ে বললেন, 'তুমি নামাজ আদায় করোনি, আবার ফিরে গিয়ে নামাজ পড়ো।' 

সেই সাহাবি আবারও আগের মতোই নামাজ আদায় করে এসে সালাম দিলেন, কিন্তু নবীজি  (সা.) তিনবার একই কথা বললেন, 'তুমি নামাজ আদায় করোনি, আবার পড়ো।' 

শেষবার সাহাবি বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, আমি তো এর চেয়ে সুন্দর করে নামাজ আদায় করতে পারি না। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন।

তখন নবীজি  (সা.) ধাপে ধাপে শিখিয়ে দিলেন সঠিক নামাজের পদ্ধতি- যার মূল শিক্ষা ছিল ধীরস্থিরতা ও প্রতিটি রোকনে যথাযথ স্থিরতা বজায় রাখা। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

নবীজি  বললেন, যখন তুমি নামাজের জন্য দাঁড়াবে, তখন তাকবির বলবে। তারপর কুরআন থেকে কিছু আয়াত পড়বে যা তোমার জন্য সহজ হয়। তারপর রুকুতে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকু আদায় করবে। তারপর রুকু’ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। এরপর সিজদা থেকে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। এভাবে পুরো নামাজ আদায় করবে। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

এ হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই

ধীরস্থিরভাবে নামাজ আদায় করা জরুরি। নামাজে তাড়াহুড়া করলে, কোনো রকম রুকু ও সিজদা আদায় করলে নামাজের সওয়াব পাওয়া যায় না। হাদিসে বর্ণিত সাহাবি তাড়াহুড়া করে নামাজ পড়েছিলেন। তাই নবীজি তাকে বলেছেন  তার নামাজ হয়নি, তিনি যেন আবার গিয়ে নামাজ পড়েন।

রুকু ও সিজদাসহ নামাজের প্রতিটি রোকনে গিয়ে স্থির হতে হবে, ওই রোকনের কেরাত বা তাসবিহগুলো পাঠ করতে হবে। প্রতিটি রোকনে গিয়ে স্থির হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করা জরুরি। কেউ যদি তাড়াহুড়া করতে গিয়ে  নামাজের   রোকনগুলো যথাযথভাবে আদায় না করে, তাহলে তার নামাজ বাতিল হয়ে যায় এবং পুনরায় আদায় করতে হয়। সাহু  সিজদা এ রকম ভুলের মাশুল হয় না। এ কারণে নবীজি (সা.) ওই সাহাবিকে সাহু সিজদা দেওয়ার নির্দেশ না দিয়ে  আবার নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।

কোনো মুসলমানকে নামাজে ভুল করতে দেখলে অপর মুসলমানের কর্তব্য তার ভুল ধরিয়ে দেওয়া। তাকে তার ভুলের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সমীচীন নয়। কেউ যদি নামাজের ওয়াজিব আমলে ভুল করে, তাহলে ওই ভুল ধরিয়ে দেওয়া ওয়াজিব এবং কেউ মুস্তাহাব আমলে ভুল করলে ওই ভুল ধরিয়ে দেওয়া মুস্তাহাব গণ্য হবে। রাসুল (সা.) নামাজে কাউকে  ভুল করতে দেখলে ভুল ধরিয়ে দিতেন। সাহাবি ও তাবেঈরাও কাউকে নামাজে ভুল করতে দেখলে ভুল ধরিয়ে   দিতেন।

নামাজ শুধু সময়নিষ্ঠ ইবাদত নয়- এটি আত্মার প্রশান্তি, চরিত্রের শুদ্ধি এবং আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার মাধ্যম। তাই নামাজে তাড়াহুড়া নয়, বরং ধীরস্থিরতা, সচেতনতা ও বিনম্রতা- এই গুণগুলোই আমাদের নামাজকে কবুলের পথে নিয়ে যাবে।

LH/FJ
আরও পড়ুন