ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সামর্থ অনুযায়ী অন্যকে সঙ্গে নিয়ে খাওয়ার ফজিলত

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪৪ এএম

মানুষকে খাওয়ানো অনেক বড় ইবাদত। অনেকে না জেনে এই আমলকে হালকা ভাবেন, কেউ কেউ ক্ষতির আশঙ্কা করেন। অথচ রাসুলুল্লাহ (স.) এই কাজটি ইসলামের অন্যতম উত্তম কাজ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বলেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেবে। (বুখারি: ১২)

মানুষকে খাওয়ানোর মধ্যে এক ধরণের প্রশান্তি রয়েছে। যা শুধুমাত্র তারাই বুঝতে পারেন, যারা কষ্টে জোগাড় করা খাবার অন্যকে নিয়ে ভাগ করে খান। এই প্রশান্তি হতে পারে আল্লাহর অনুগ্রহেরই সামান্য অংশ। কেননা মহানবী (স.) বলেন, ‘দয়াশীলদের ওপর দয়াময় আল্লাহ দয়া করে থাকেন। তোমরা জমিনবাসীদের ওপর দয়া করো, আসমানবাসী (আল্লাহ) তোমাদের ওপর দয়া করবেন।’। (তিরমিজি: ১৯২৪; আবু দাউদ: ৪৯৪১)

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকবে, আল্লাহ তার সাহায্যে থাকবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিনে একটি বড় বিপদ দূর করে দেবেন।’ (বুখারি: ২৪৪২; মুসলিম: ২৫৮০) 

মহান আল্লাহ তাদের সুনাম করেছেন, তাদের জন্য উত্তম প্রতিদানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, এতিম ও বন্দিকে খাদ্য দান করে। তারা বলে, ‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কোনো শোকরও না। আমরা আমাদের রবের পক্ষ থেকে এক ভয়ংকর ভীতিপ্রদ দিবসের ভয় করি। সুতরাং সেই দিবসের অকল্যাণ থেকে আল্লাহ তাদের রক্ষা করলেন এবং তাদের প্রদান করলেন উজ্জ্বলতা ও উত্ফুল্লতা।’ (সুরা দাহর: ৮-১১)

উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষকে খাওয়ানোর নীতিমালা বাতলে দিয়েছেন। সেগুলো হলো— ১. মানুষকে খাওয়াতে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। ২. এর বিনিময়ে কখনো তাদের কাছে কোনো প্রতিদানের আশা করা যাবে না। ৩. এই আশাও করা যাবে না যে তারা আমার গুণগান গাইবে। ৪. মানুষকে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ তাকওয়া থাকতে হবে। তবেই আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করবেন। অন্যথায় রিয়া, খোঁটা কিংবা দুনিয়াবি ফায়দা হাসিল ইত্যাদি উদ্দেশ্যের কারণে সব পুণ্য নষ্ট হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। মানুষকে খাওয়ানোর সওয়াব

আবার অনেকে মনে করতে পারে, আমার সামর্থ্য নেই, আমি কোত্থেকে খাওয়াব? আমি নিজেই তো অভাবে আছি। তাদের উদ্দেশে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অথবা খাদ্য দান করা দুর্ভিক্ষের দিনে, এতিম আত্মীয়-স্বজনকে, অথবা ধূলি-মলিন মিসকিনকে। অতঃপর সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যারা ঈমান এনেছে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্যধারণের, আর পরস্পরকে উপদেশ দেয় দয়া-অনুগ্রহের। তারাই সৌভাগ্যবান।’ (সুরা বালাদ: ১৪-১৮)

তাই আমাদের উচিত, সক্ষমতা অনুযায়ী মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করা। হয়ত এ ওসিলায় আল্লাহ আমাদের সামর্থ্য বাড়িয়ে দিতে পারেন। তাছাড়া উপার্জনের একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি নিয়ম করে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা যায়, এর উপকারিতা খুব দ্রুতই টের পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে উপার্জনে বরকত হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) মদিনায় গমন করে সর্বপ্রথম যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন, তার মধ্যে একটি ছিল মানুষকে খাওয়ানো!

আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) যখন মদিনায় এসে পৌঁছলেন, মানুষ তখন দলে দলে তাঁর নিকট দৌড়ে গেল। বলাবলি হতে লাগল যে রাসুলুল্লাহ (স.) এসেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) এসেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) এসেছেন। অতএব, তাঁকে দেখার জন্য আমিও লোকদের সঙ্গে উপস্থিত হলাম। আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলাম যে, এই চেহারা কোনো মিথ্যুকের চেহারা নয়। তখন তিনি সর্বপ্রথম যে কথা বললেন তা এই: হে মানুষ! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, খাদ্য দান করো এবং মানুষ ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় (তাহাজ্জুদ) নামাজ আদায় করো। তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা সহিসালামতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি: ২৪৮৫)

সাহাবিদের জীবনে দেখা যায়, তাঁরা অত্যধিক দানশীল ছিলেন। মানুষকে খাওয়ানোর ব্যাপারে তাঁদের আগ্রহ ছিল প্রবল। এমনকি মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিতেন। বিশেষ করে অনাহারিদের খোঁজ খবর নিতেন নিয়মিত। অনেক সময় নিজের পরিচয় গোপন করে খাবার রেখে আসতেন। এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে সাহাবি-তাবেয়িনদের জীবনীতে।  মানুষকে খাওয়ানোর কারণে একের প্রতি অন্যের শ্রদ্ধা-ভালবাসা, আন্তরিকতা ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের মধ্যে উত্তম মানুষ তারা, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়। (মুসনাদে আহমদ: ২৩৯৭১) 

HN
আরও পড়ুন