ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

যে দেশে এখন ২০১৭ সাল চলছে!

আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪০ পিএম

যদি বলা হয় যে এখন ২০১৭ সাল চলছে, নিশ্চিতভাবেই বিষয়টি উদ্ভট ও রসিকতা মনে হবে। কিন্তু বিষয়টি মোটেও রসিকতার পর্যায়ে নেই। দুনিয়াজুড়ে আজ ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর হলেও পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায় আজ ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারী। অর্থাৎ আপনি যদি আজকে দেশটিতে যান তাহলে সময় ও তারিখ মেলাতে গিয়ে দেখবেন, ৭ বছর ৮ মাস পিছিয়ে গেছেন।

শুনতে অনেকটা টাইম ট্রাভেলের মতো লাগলেও ঘটনা সত্য। তবে এখানেই শেষ নয়। আমরা জানি ১২ মাসে বছর। কিন্তু ইথিওপীয় ক্যালেন্ডারে বছর হয় ১৩ মাসে। ২৮, ২৯, ৩০ বা ৩১ দিন- ভিন্ন ভিন্ন মাসের এই ভিন্ন ভিন্ন হিসাবেও তারা যায় না। তাদের ১২ মাসই ৩০ দিনের। বাকি যে পাঁচ দিন উদ্বৃত্ত থাকে সেগুলোর সমন্বয়ে হয় ত্রয়োদশ মাস। অধিবর্ষ হলে ত্রয়োদশ মাসটি হয় ছয় দিনের। যার ফলে পিছিয়েই থাকে দেশটি। প্রশ্ন হচ্ছে কেন আর কীভাবে পিছিয়ে থেকেও দেশটি বহির্বিশ্বের সঙ্গে কাজ করছে?

অনন্য ক্যালেন্ডার: এসবের কারণ মূলত তাদের স্বতন্ত্র ক্যালেন্ডার। বিশ্বের অন্যান্য দেশ গ্রেগরিয়ান বা পশ্চিমা ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে। রোমান চার্চ যখন ৫০০ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার সমন্বয় করে তখন ইথিওপীয় অর্থোডক্স চার্চ পুরোনো ক্যালেন্ডারেই স্থির থাকার সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। এখনো সেভাবেই চলছে এবং সে দেশের জনগণও ব্যাপারটিকে তাদের ধর্মীয় আদর্শ, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও জাত্যভিমান হিসেবেই বিবেচনা করে।

রোটেট ইথিওপিয়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলের প্রধান নির্বাহী এশেতু গেতাশু বলেন, ‘আমরা অনন্য। আমাদের নিজস্ব বর্ষপঞ্জি আছে, নিজস্ব বর্ণমালা ও সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য আছে।’

জার্মানিতে অবস্থানরত ইথিওপিয়ান প্রত্নতাত্ত্বিক গৈতম ডব্লিউ টেকল বলেন, ‘আমি ওই ক্যালেন্ডারের সাথে মানিয়ে নিতে পারি না। এটি চ্যালেঞ্জিং। আমাকে ঘণ্টা নিয়ে, দিন নিয়ে, কখনো মাস নিয়ে এবং এমনকি কখনও বছর নিয়েও ভেবে তারপর নিশ্চিত হতে হয়। কিছু প্রতিষ্ঠানকে ইথিওপিয়ানদের সাথে যোগাযোগের সময় দুটি ক্যালেন্ডারই অনুসরণ করতে হয়।’

ইথিওপীয় চিত্রগ্রাহক অ্যাবেল গ্যাশো বলেন, ‘ইথিওপিয়া খুবই রক্ষণশীল খ্রিষ্টান দেশ। বাকি বিশ্বে কী হচ্ছে না হচ্ছে, এ দেশের অধিকাংশ লোকই তার তোয়াক্কা করে না।’

তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি: জার্মান ইতিহাসবিদ ভেরেনা ক্রেবস জানান, ধরুন একটি শিশুর বয়স তিন বছর। আপনি শিশুটির জন্ম সনদের জন্য স্থানীয় সরকারের কাছে আবেদন করলেন। আবেদনের সময় আপনি ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শিশুটির জন্মের সময় উল্লেখ করলেন। এরপর কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শিশুটির জন্ম তারিখ লিপিবদ্ধ করবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যায়।

তিনি আরও জানান, দুই ক্যালেন্ডারের সময়ের পার্থক্যের কারণে শিশুটির বয়স সঠিক বয়সের চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণও হয়ে যেতে পারে। বিষয়টির সাথে যারা অভ্যস্ত নন, তাদের এটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।

১২ ঘণ্টার ঘড়ি: ইথিওপিয়ানদের সময়ের হিসাবটিও বিচিত্র। যেখানে বেশিরভাগ দেশে দিনের শুরুটা হিসাব করা হয় মধ্যরাত অর্থাৎ রাত ১২টা থেকে, ইথিওপিয়ায় সেটি হিসাব করা হয় সকাল থেকে। বেশিরভাগ দেশ যেখানে ২৪ ঘণ্টার ঘড়ি পদ্ধতি ব্যবহার করে, সেখানে ইথিওপিয়ানরা ব্যবহার করে ১২ ঘণ্টার ঘড়ি। এ ঘড়ি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। তবে মজার ব্যাপারটি হলো এই ঘড়িতে সময় শুরু হয় সকাল ১টা থেকে। সকাল ১টা শুনে মনে খটকা তৈরি হতে পারে। তবে বিষয়টি হলো বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ যে সময়কে সকাল ৭টা বলে বিবেচনা করে, ইথিওপিয়ানদের ঘড়ি অনুযায়ী সেটি হলো সকাল ১টা।

অবশেষে প্রশ্ন হলো- তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরাও দিন দিন বিশ্বের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। তাই অদূর ভবিষ্যতে ইথিওপিয়ানরা কি তাদের নিজস্ব বর্ষপঞ্জি থেকে বেরিয়ে আসবে, নাকি তাদের আদি বর্ষপঞ্জিতেই থেকে যাবে?

JA/SN
আরও পড়ুন