ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

রেকর্ড পরিমাণ রিজার্ভ নিয়ে নতুন অর্থবছর শুরু

আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৫, ০১:০২ পিএম

রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক ধারা নিয়ে নতুন (২০২৫-২৬) অর্থবছর শুরু হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে এ খবর জানা গেছে। জানা গেছে, এটি এক অর্থবছরে দেশে আসা সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। প্রবাসী আয়ের এমন ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও ডলারের জোগানে স্বস্তি এনে দিয়েছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগপৎ নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়ায় প্রবাসীরা বৈধ পথে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। যেখানে আগে অনেকেই হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন, এখন ব্যাংক বা বৈধ চ্যানেল বেছে নিচ্ছেন। ফলে প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ডলারের চাপ কিছুটা কমেছে, রিজার্ভও বেড়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটা দেশের জন্য ভালো একটা পরিবর্তন।

এদিকে, কয়েকটি আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার অর্থ পাওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশের মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের এই অঙ্ক গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩ সালে জুনে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছিল। এ ছাড়া আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে মোট রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার।

এ ছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বিপিএম-৬ ছিল ২১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।

এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়, প্রকাশ করা হয় না। তবে তিনটি আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার অর্থ পাওয়ায় পর হঠাৎ ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে তাও জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্রের দপ্তর থেকে জানানো হয়, চলতি বছরের ২৯ জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ আছে দুই হাজার ৩ কোটি মার্কিন ডলার (২০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার)। অর্থবছর শেষে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ আরও তিন কোটি ডলার বেড়েছে, অর্থাৎ ২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করে এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ সহায়তার অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ হয়েছে।

গত বুধবার (২৫ জুন) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুত বা রিজার্ভ বৃদ্ধির কারণ জানান  অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার মতে, বাজেট সহায়তা হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ পাওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স মোটামুটি ভালো হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে।

এদিকে, নতুন (২০২৫-২৬) অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মিডিয়াম টার্ম ম্যাক্রোইকোনমিক পলিসি স্টেটমেন্ট অনুযায়ী, নতুন অর্থবছরে রপ্তানিতে ১০ শতাংশ, আমদানিতে ৮ শতাংশ এবং রেমিট্যান্সে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।

চলমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও রেমিট্যান্স ও রিজার্ভে বাংলাদেশ যে প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে, তা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ইতিবাচক বার্তা। নতুন অর্থবছরের শুরুতে এমন অর্জন সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে আরও গতিশীল করতে এবং বিনিয়োগ ও উন্নয়ন ব্যয়ের জন্যও সহায়ক হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

SN
আরও পড়ুন