ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ইলিশের ওজন অনুযায়ী দাম নির্ধারণের সুপারিশ

আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:১৯ এএম

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) বা ট্যারিফ কমিশন ইলিশের ওজন অনুযায়ী সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। স্থানীয় বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় এমন সুপারিশ করেছে এই সরকারি সংস্থাটি। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ট্যারিফ কমিশন ইলিশ মাছের দরদাম নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট মাসে দেড় কেজি বা তারও বেশি ওজনের ইলিশের প্রতি কেজির মূল্য ছিল ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের গড় দাম ছিল ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। আর ৭৫০ গ্রাম থেকে এক কেজি সাইজের প্রতি কেজি ইলিশের মূল্য ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং আধা কেজি থেকে ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা।

অথচ গত বছরের আগস্টে দেড় কেজি বা তারও বেশি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০-১ হাজার ৮০০ টাকায়। ৭৫০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ১০০-১ হাজার ১৫০ টাকা, ৫০০-৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছিলো ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়।

বিটিটিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে ৩ হাজার টাকা কেজি দরে ইলিশ বিক্রি হলেও এ বছর ভারতে প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ১ হাজার ৫৩৩ টাকা। এই মূল্যে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ৯৭ দশমিক ৩৬ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যমান রপ্তানি মূল্যে যদি ব্যবসায়ীরা মুনাফা করতে পারেন, তাহলে স্থানীয় বাজারের মূল্যে ব্যবসায়ীরা উৎপাদন মূল্যের (সংগৃহীত মূল্য) তুলনায় অস্বাভাবিক হারে মুনাফা করছেন। অস্বাভাবিক দামে ইলিশ বিক্রির একটি তুলনাও তুলে ধরেছে ট্যারিফ কমিশন। যেসব জেলেরা ইলিশ ধরেন তারা তিন ধরনের নৌকা ব্যবহার করেন। ছোট নৌকায় যারা ইলিশ ধরেন তাদের প্রতি কেজি ইলিশে মোট খরচ পড়ে ৮১৩ টাকা, মাঝারি নৌকায় প্রতি কেজি ইলিশে মোট খরচ ৮৪৭ টাকা এবং বড় নৌকায় ধরা ইলিশের সামগ্রিক খরচ পড়ে ৮২৮ টাকা। অথচ খুচরা বাজারে এই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে।

কমিশন বলছে, সাধারণভাবে ৪-৬ স্তরে (হাতবদল) ইলিশ মাছ গ্রাহকের কাছে পৌঁছায়। প্রতিটি স্তরে ইলিশের মূল্য বেড়ে যায় ৫৯-৬০ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে জেলেরা প্রাথমিক পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে ভোক্তাকে চূড়ান্তভাবে এর ভার বহন করতে হয়।

ট্যারিফ কমিশন ইলিশের দাম বাড়ার পেছনে ১১টি কারণ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা, মজুত ও সিন্ডিকেট, জ্বালানি তেল ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, মাছ ধরার খরচ বৃদ্ধি, নদীর নাব্যতা সংকট ও পরিবেশগত সমস্যা, অবৈধ জালের ব্যবহার, দাদন, বিকল্প কর্মসংস্থান, নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও রপ্তানির চাপ।

এর মধ্যে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্যের ক্ষেত্রে অনেক সময় কৃত্তিম সংকট তৈরি করেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য তারা ইলিশের অবৈধ মজুদ গড়ে তোলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিশনের প্রতিবেদনে দাম নির্ধারণের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরাসরি পাইকার বা আড়তদারদের কাছে মাছ বিক্রির জন্য জেলেদের সমবায় সমিতি গঠন করতে সুপারিশ করা হয়েছে। সরবরাহ চেইনের ধাপ কমানোর জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি,ন্যায্য দামে ইলিশ বিক্রি নিশ্চিত করতে প্রধান প্রধান শহরগুলোতে সরকারি উদ্যোগে ইলিশের বিশেষ বিপনন কেন্দ্র স্থাপন, কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করা, সব আড়তদার ও পাইকারদের বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স প্রদান, সরবরাহ ব্যবস্থার ধাপ অনুযায়ী যৌক্তিক মুনাফা বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি দাদন প্রদানকারীদের দৌরাত্ম্য কমাতে সহজ শর্তে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন।

গত পাঁচ বছরে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম ৫৭ শতাংশ বেড়েছে বলে ট্যারিফ কমিশন বলছে। এ ছাড়া গত চার বছরে রপ্তানি মূল্যও বেড়েছে। ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ছিল ৯৪৭ টাকা। এ বছর তা ১ হাজার ৫৩৪ টাকায় উন্নীত হয়। প্রতিবছর গড়ে সাড়ে পাঁচ লাখ টনের মতো ইলিশ আহরিত হয়। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৯ হাজার টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছে।

HN
আরও পড়ুন