ভ্রমণ ডেস্ক: প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের পুরোনো পিরোজপুরের রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ি। এটি জেলার অন্যতম একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। জেলা সদর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই জমিদার বাড়ি। এখানে রয়েছে রাজভবন, অতিথিশালা, নহবৎখানা, নাট্যশালা এবং মন্দির। এই জমিদার বাড়িতে ছোট বড় প্রায় দুইশত অট্টালিকা ছিলো। যার মধ্যে ৪০-৫০টি বিশালাকৃতির অট্টালিকা শুধুমাত্র রাজবাড়ির শোভাবর্ধনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
১৬৫৮ সালে রায়েরকাঠী জমিদার বাড়িতে কালিমন্দির নির্মাণ করা হয়। যেখানে প্রায় ২৫ মণ ওজনের একটি শিব লিঙ্গ স্থাপন করা হয়। এই শিব লিঙ্গকে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শিব লিঙ্গ মনে করা হয়। বর্তমানে রায়েরকাঠী জমিদার বাড়িতে ৭টি ভবন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
জমিদার বাড়ির ইতিহাস: সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে যুবরাজ সেলিম বিদ্রোহ ঘোষণা করে বাংলায় এসে ঝালকাঠি, বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলার কিছু অংশ নিয়ে একটি পরগণা সৃষ্টি করে। পরে ওই পরগণার নাম রাখেন সেলিমাবাদ। ১৬১৮ সালে মদন মোহন সেলিমাবাদ পরগণার রাজস্ব আদায়ের জন্য নিযুক্ত হন। ১৬২৮ সালে মদন মোহন সেলিমাবাদ পরগণার কিছু জমি তার ছেলে শ্রীনাথের নামে কিনে নেন। পরবর্তীতে মোগল সম্রাট শ্রীনাথ রায়কে রাজা উপাধিতে ভূষিত করেন।
১৬৫৮ সালে রাজা শ্রীনাথ রায়ের ছেলে রুদ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী বর্তমান পিরোজপুরের কাছে বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে রাজবাড়ি এবং মন্দির নির্মাণ করেন। বন-জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে নতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে অঞ্চলটি রায়েরকাঠি নামে পরিচিতি পায়।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সড়ক এবং নৌপথে সহজেই পিরোজপুর যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস নিয়মিতভাবে সকাল ও রাতে পিরোজপুরের পথে যাত্রা করে। গাবতলী থেকে সাকুরা পরিবহন ও ঈগল পরিবহনের বাস প্রতিদিন সকাল এবং রাতে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আর সায়েদাবাদ বাসস্টান্ড থেকে দোলা পরিবহন, হামিম পরিবহন এবং বনফুল পরিবহনসহ বেশকিছু বাস ঢাকা থেকে পিরোজপুরের পথে চলাচল করে।
নদী পথেও পিরোজপুর যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। রাজধানী ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় লঞ্চ রাজদূত ও পারাবত এবং রাত ৯টায় স্টীমার অস্ট্র্চি পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পিরোজপুর সদরে পৌঁছনোর পরে রিক্সা বা অটোরিক্সায় সহজেই মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ি যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন: পিরোজপুরে রাত্রি যাপনের জন্য মোটামুটি মানের বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল রিল্যাক্স, হোটেল রজনী, হোটেল অবকাশ, হোটেল ডালাস, হোটেল সিনথিয়া, হোটেল আল মদীনা, হোটেল শাহ নেওয়াজ (ইন্দেরহাট বন্দর) উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন: পিরোজপুরে খাবারের জন্য কিছু সাধারণ মানের হোটেল পাবেন যেখানে আপনি আপনার স্বাভাবিক খাবারের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।
