জাতিসংঘের প্রতিবেদন

বিশুদ্ধ পানি সংকট বিশ্বকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪, ০১:৪৭ পিএম

বিশুদ্ধ পানির অভাবের সাথে সাথে ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি বিশ্বকে আরো সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

শুক্রবার (২২ মার্চ) জাতিসংঘের বিশ্ব পানি উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২৪ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ২.২ বিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। ৩.৫ মিলিয়ন মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সম্প্রতি ইউনেস্কোর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামাঞ্চলের কিশোরি এবং নারীরা সবচেয়ে বেশি বিশুদ্ধ পানির অভাবের শিকার। কারণ তাদেরকে এই পানি বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হয়। নিরাপদ স্যানিটেশনের অভাব এবং দিনে কয়েকঘণ্টা পানি সংগ্রহের কাজে ব্যয় করার জন্য অনেক মেয়েকে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়তে হয়। ইউনেস্কোর প্রধান অড্রে আজৌলে বলেছেন, পানির ঘাটতি শুধুমাত্র ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাকেই উসকে দেয় না বরং সামগ্রিকভাবে মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও হুমকি সৃষ্টি করে।

গাজায় যুদ্ধকালীন সময়ে ইসরায়েল বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে শুধুমাত্র গাজার নারী ও শিশুরা ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় মারাত্বক মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশুদ্ধ পানির অভাবে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও হুমকির মুখে পড়েছে। সুপেয় পানি সংকটে অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সোমালিয়ায় বাস্তুচ্যুত একটি গোষ্ঠির বিরুদ্ধে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা ২০০ শতাংশ বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী অভিবাসন প্রত্যাশীদের সংখ্যার ১০ শতাংশ জলবায়ু সংকট ও বিশুদ্ধ পানি সংকটের কারণে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আরও আর্দ্র ও শুষ্ক আবহাওয়া, বন্যা ও খরার তীব্রতা বাড়িয়ে দেবে। 

‘সমৃদ্ধি ও শান্তির জন্য পানি’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা তীব্র পানির অভাবের সম্মুখীন। কিছু কিছু এলাকায় প্রায় সারা বছর পানির অভাব দেখা যায়। দরিদ্র দেশগুলোতেই সবচেয়ে বেশি এই সংকট। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা তাদের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

১৪০টি নিম্ন থেকে মধ্য আয়ের দেশে নিরাপদ পানীয়, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি সরবরাহ করতে বছরে ১১৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে বলে প্রতিবেদনে একটি আনুমানিক খরচের হিসেব করা হয়েছে।

ইউনেস্কোর সহযোগী ওয়াটার জাস্টিস হাবের কোয়েন্টিন গ্রাফট আল জাজিরাকে বলেন, এই পানি সমস্যা শুধু সিরিয়া বা সুদানের নয়। এই সমস্যা আমাদের সকলের। কারণ আমরা এই বিশুদ্ধ পানি দিয়ে খাদ্য উৎপাদন করি, তা সেচের মাধ্যমেই হোক আর বৃষ্টির মাধ্যমেই হোক। জলবায়ু সংকটের কারণে যদি আমরা তীব্র পানি সংকটে পরে যাই তাহলে প্রয়োজনীয় খ্যদ্য উৎপাদনে অসমর্থ হবো।

জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার পানি দিবস উপলক্ষ্যে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ১৫৩টি দেশ পানি সম্পদ ভাগাভাগি করলেও মাত্র ২৪টি দেশ তাদের সকল পানি ভাগ করার বিষয়ে সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। জাতিসংঘের ওয়াটার কনভেনশনের সেক্রেটারি সনজা কোপেলে এএফপিকে বলেন, সমস্ত স্বাদু পানি সম্পদের ৬০ শতাংশ দুই অথবা ততোধিক দেশ ভাগ করে নেয়। যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপের রাইন ও দানিউব, এশিয়ার মেকং, আফ্রিকার নীলনদ, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন।

RY/FI