ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

জেট-স্কিতে গাজা থেকে ইউরোপে! চ্যাটজিপিটির সহায়তায় ফিলিস্তিনি যুবকের দুঃসাহসিক যাত্রা

আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১৮ পিএম

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা থেকে জীবন বাঁচাতে অবিশ্বাস্য এক যাত্রা সম্পন্ন করেছেন  ফিলিস্তিনি যুবক মহম্মদ আবু দাখা। মাত্র একটি জেট-স্কি, কিছু প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটজিপিটির সাহায্যে, তিনি লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপের মাটি ছুঁয়েছেন।

আবু দাখা জানান, তিনি প্রথমে চিনে গিয়েছিলেন এই আশায় যে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবেন। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তিনি মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া হয়ে আবার মিশরে ফিরে আসেন। এরপর আবু দাখা লিবিয়া যান। কিন্তু আবু দাখার ইউরোপে পৌঁছানোর পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত অস্বাভাবিক।

আবু জানান, চোরাকারবারিদের সঙ্গে তার ১০টি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি একটি পুরনো ইয়ামাহা জেট স্কি প্রায় ৫ হাজার ডলারে লিবিয়ার একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে কেনেন। এছাড়াও, তিনি জিপিএস, স্যাটেলাইট ফোন এবং লাইফ জ্যাকেটের মতো অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য আরও ১ হাজার ৫০০ ডলার খরচ করেন।

৩১ বছর বয়সী আবু দাখার সঙ্গে ছিলেন আরও দুই ফিলিস্তিনিয যুবক। ২৭ বছর বয়সী দিয়া এবং ২৩ বছর বয়সী বাসেম। তারা ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে গাজা থেকে মিশরে প্রবেশ করেন। পরে বহুবার ব্যর্থ হয়ে, অবশেষে লিবিয়া থেকে পুরনো একটি ইয়ামাহা জেট-স্কি কিনে সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করেন। 

আবুর কথায়, তারা প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে জেট স্কি চালিয়েছিলেন। একটি তিউনিসীয় টহলদারি নৌকা থেকে বাঁচতে এবং অতিরিক্ত রসদ নিয়ে একটি ডিঙি নৌকা টেনে তারা এই যাত্রা করেন।

প্রায় ১২ ঘণ্টা জেট-স্কি চালিয়ে এবং একটি ডিঙি নৌকা টেনে তারা ল্যাম্পেডুসা দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছান। চ্যাটজিপিটির সাহায্যে জ্বালানির হিসাব করলেও, গন্তব্যে পৌঁছানোর ২০ কিমি আগেই জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। এরপর স্যাটেলাইট ফোনে তারা সাহায্য চাইলে রোমানিয়ান একটি টহল নৌকা তাদের উদ্ধার করে।

ল্যাম্পেডুসা থেকে তাদের এই দুঃসাহসিক যাত্রা অব্যাহত থাকে। তিনজনকে একটি ফেরিতে করে সিসিলির মূল ভূখণ্ডে নিয়ে যাওয়া হয়, তারপর সেখান থেকে উত্তর-পশ্চিম ইটালির জেনোয়াতে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তারা বাস থেকে পালিয়ে যান। 

পরবর্তীতে ল্যাম্পেডুসা অভিবাসী কেন্দ্র থেকে তাদের সিসিলিতে এবং সেখান থেকে জেনোয়ায় স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু পথে তারা বাস থেকে পালিয়ে যান। এরপর আবু ব্রাসেলস হয়ে জার্মানির ব্রামশে শহরে পৌঁছান, যেখানে তার আত্মীয় রয়েছেন।

ইউরোপীয় সীমান্ত সংস্থা Frontex একে ‘অস্বাভাবিক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছে।

বর্তমানে আবু দাখা জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন এবং শুনানির অপেক্ষায় আছেন। তার পরিবার এখনও গাজার খান ইউনিসে একটি তাঁবু শিবিরে অবস্থান করছে।

আবু দাখা বলেন, ‘পরিবার ছাড়া জীবনের কোনো অর্থ নেই। আমি চাই ওদেরকেও এখানে নিয়ে আসতে।’

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজারের বেশি অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেছে, যাদের অনেকেই এসেছে লিবিয়া ও তিউনিসিয়া থেকে।

আবু দাখা বলেন, ‘পরিবার ছাড়া জীবনের কোনো অর্থ নেই। আমি চাই ওদেরকেও এখানে নিয়ে আসতে।’

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজারের বেশি অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেছে, যাদের অনেকেই এসেছে লিবিয়া ও তিউনিসিয়া থেকে। সূত্র: রয়টার্স

FJ
আরও পড়ুন