ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

গাজার কাছে ‘চরম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়’ সুমুদ ফ্লোটিলা

আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩১ পিএম

গাজামুখী ত্রাণবাহী 'সুমুদ ফ্লোটিলা' বর্তমানে ভূমধ্যসাগরের 'চরম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়' পৌঁছেছে। ফ্লোটিলাটি গাজার উপকূল থেকে প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে। মানবিক সহায়তা নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর এই প্রচেষ্টা এখন আন্তর্জাতিক নজরকাড়া একটি ঘটনা হয়ে উঠেছে। এর আগে যতবার ওই এলাকায় ফ্লোটিলা পৌঁছানোর চেষ্টা চালায় সবগুলোর ওপরই হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

বুধবার (১ অক্টোবর) আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ত্রাণবাহী নৌকায় মানবাধিকারকর্মীদের সাহসী যাত্রা

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানবাধিকারকর্মীরা এই ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছেন। খাবার, ওষুধ, কাপড়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে তারা ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমা দিয়ে গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য, ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধ ভেঙে গাজার দুর্গত মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া।

ফ্লোটিলার নিরাপত্তার জন্য তুরস্কের ড্রোন সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। কিছু নৌকা থেকে লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে পরিস্থিতি তুলে ধরা হচ্ছে, যাতে ইসরায়েলি বাহিনীর যেকোনো আগ্রাসন প্রকাশ্যে আসে।

ইসরায়েলি হুমকি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলার পথ রোধে বদ্ধপরিকর। তারা দাবি করছে, গাজার উপর তাদের অবরোধ ‘আইনসিদ্ধ’। তবে আন্তর্জাতিক আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, যেকোনো পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষের কাছে মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর অধিকার রয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে হামলা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত করার অভিযোগ উঠেছে।

ফ্লোটিলা অভিযানের অন্যতম আয়োজক ডেভিড অ্যাডলার সমাজমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “গত রাতে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর জাহাজ আমাদের হুমকি দিয়েছে, আমাদের জাহাজে আক্রমণ করেছে, ক্রুদের ভয় দেখিয়েছে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ইসরায়েলি বাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে তাদের অপহরণ করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব নেতারা ফ্লোটিলার নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। জাতিসংঘের বিশেষদূত ফ্রান্সিসকা আলবানিজ, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী ম্যাট থিসলথওয়াইট এবং তুরস্কের তরুণ আইনপ্রণেতা জেহরানুর আয়দেমির ফ্লোটিলার পূর্ণ নিরাপত্তার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সমর্থন ও উত্তেজনা

স্পেন ও ইতালি থেকে আগত মানবাধিকারকর্মীরা ফ্লোটিলা নিয়ে ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাট থিসলথওয়াইট ইসরায়েলি ড্রোন হামলার অভিযোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছয়জন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এই ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, সব পক্ষ আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবে এবং অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকবে।”

তুরস্কের আইনপ্রণেতা জেহরানুর আয়দেমির এক্স পোস্টে বলেন, আমাদের চোখ, কান ও হৃদয় সুমুদ ফ্লোটিলার সঙ্গে আছে। তিনি ফ্লোটিলার অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহিত করেছেন এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য সংহতি প্রকাশ করেছেন।

ইসরায়েলি বাহিনীর পূর্ববর্তী কর্মকাণ্ড

ইসরায়েলি বাহিনী অতীতে ফ্লোটিলার ওপর হামলা চালিয়েছে। এবারও তারা ফ্লোটিলার ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ১৫ মিনিটের জন্য বিঘ্নিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফ্লোটিলা গাজার জলসীমার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

অংশগ্রহণকারীরা তাদের মোবাইল ফোন ও সিসিটিভির মাধ্যমে পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছেন, যাতে ইসরায়েলি বাহিনীর যেকোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রকাশ্যে আসে।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গাজার মানুষের প্রতি বিশ্ববাসীর সংহতির প্রতীক। ইসরায়েলি অবরোধের বিরুদ্ধে এই সাহসী উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকর্মী ও নেতাদের সমর্থন পেয়েছে। তবে, ইসরায়েলি বাহিনীর হুমকি ও সম্ভাব্য আগ্রাসনের কারণে ফ্লোটিলার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায় এখন ফ্লোটিলার নিরাপত্তা ও গাজার মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর বিষয়ে নজর রাখছে।

LH/FJ
আরও পড়ুন