ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বহু পুরনো উত্তেজনার কেন্দ্রে এবার উঠে এসেছে একটি নতুন ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু—পানি সংকট। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দৃঢ় ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে, পানি সমস্যার সমাধান না হলে দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের যুদ্ধবিরতি হুমকির মুখে পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন- এ দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন, যা পরে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন- এ প্রকাশিত হয়।
ইসহাক দার বলেন, যদি দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন ইস্যুতে কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান না আসে, তাহলে সেটি হবে যুদ্ধ ঘোষণার মতো একটি পদক্ষেপ। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন, পানি মানুষের মৌলিক অধিকার, এর সুষ্ঠু বণ্টন না হলে ফল হবে ভয়াবহ।
সাক্ষাৎকারে ইসহাক দার অভিযোগ করেন, গত ৭ মে ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীর সীমান্তে বিনা উসকানিতে পাকিস্তানি ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে। তিনি জানান, পাকিস্তান শান্তিপূর্ণ নীতিতে বিশ্বাসী এবং প্রথমে হামলা চালানোর পক্ষপাতী নয়, তবে আত্মরক্ষার স্বার্থে পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়েছে।
তার ভাষায়, `আমরা পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করতে চাই না। সেটি আমাদের নীতির মধ্যে নেই। কিন্তু যখন আমাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত আসে, তখন প্রতিরোধ ছাড়া উপায় থাকে না।'
সম্প্রতি ভারত সরকার একতরফাভাবে একটি পানি-সম্পর্কিত চুক্তি স্থগিত করেছে বলে দাবি করেন দার। তিনি এই সিদ্ধান্তকে যুদ্ধবিরতির ওপর সরাসরি আঘাত বলে অভিহিত করে বলেন, ভারতকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে, এটিকে যুদ্ধ ঘোষণার মতোই গণ্য করা হবে।
কাশ্মীর প্রসঙ্গেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দার শক্ত অবস্থান নেন। তার মতে, এই অঞ্চলটিই দক্ষিণ এশিয়ার অস্থিরতার মূল উৎস। তিনি বলেন, কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত না করলে এই সংকট কখনোই দূর হবে না। ভারতের আধিপত্যবাদী নীতিই কাশ্মীর সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে।
তিনি আরও বলেন, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক কার্যক্রম শুধু আগ্রাসন নয়, বরং তা দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থিতিশীলতার নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান পরিষ্কার করে ইসহাক দার বলেন, 'আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এবং এ নিয়ে কোনো আপস নেই। পেহেলগামের হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।'
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করে বলেন, `প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেছেন। তারা আমাদের প্রতি আস্থা রেখেছেন বলেই এতটা সহযোগিতা করেছেন।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, এখনো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা শুরু হয়নি, তবে তিনি আশাবাদী যে ভারতের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা আলোচনার টেবিলে বসবে।
তিনি আরও বলেন, এমন সময় আসে, যখন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা জানি আমাদের সামরিক শক্তি কতটা, কিন্তু আমরা সেটার ব্যবহার চাই না— আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান।
বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত ও পাকিস্তান—এই দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক বরাবরই স্পর্শকাতর। কাশ্মীর ইস্যু, সীমান্ত সংঘাত ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বহুবার উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এবার পানি সংকট সেই সম্পর্কের নতুন এবং গভীরতর সংকট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে অতীতেও মতপার্থক্য ছিল, তবে এবার সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার ইঙ্গিত বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত ও পাকিস্তান যদি আলোচনায় না বসে বরং শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নামে, তাহলে তা গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় উদ্বিগ্ন ভারত
ভারতের হামলায় পাকিস্তানের ১১ সেনা ও ৪০ বেসামরিক নিহত