পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ ‘সাংস্কৃতিকভাবে সর্বদাই ভারতের অংশ’ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের এমন মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে রাজনাথের এই মন্তব্যকে ‘অবাস্তব, উসকানিমূলক এবং ইতিহাস বিকৃত করার বিপজ্জনক প্রচেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
সম্প্রতি রাজনাথ সিং ভারতের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদভানির একটি বইয়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘সিন্ধি হিন্দুরা সিন্ধ প্রদেশকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াটা এখনও মেনে নিতে পারেননি। যদিও সিন্ধের ভূমি এখন ভারতের অংশ নয়, কিন্তু সাংস্কৃতিকভাবে সিন্ধ সবসময়েই ভারতের অংশ হয়েই থাকবে।’
তিনি আরও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে বলেন, ‘জমির প্রসঙ্গ যদি ওঠে, তাহলে সীমানা তো পরিবর্তন হতেই পারে। কে বলতে পারে, সিন্ধ কাল আবারও ভারতে ফিরে আসতে পারে।’
রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্যের পর সিন্ধের ইতিহাস এবং ভারত-পাকিস্তান বিভাজনে এর ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ও ঐতিহাসিকদের মতে, সিন্ধ প্রদেশ প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার (মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা) কেন্দ্রস্থল ছিল। গবেষক সোহেল জাহির লারির মতে, সিন্ধু সভ্যতা বর্তমান পাকিস্তানের প্রায় পুরো ভূখণ্ডজুড়ে বিস্তৃত ছিল।
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩২৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, এরপর মৌর্য, কুষাণ, এবং ৭১১ খ্রিষ্টাব্দে আরবদের শাসনের অধীনে ছিল এই অঞ্চল। পরবর্তীতে মুঘল আমল এবং ১৮৪৩ সালে ব্রিটিশদের হাতে সিন্ধি রাজপরিবারের পতন ঘটে। ব্রিটিশরা সিন্ধকে বোম্বে প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত করে। তবে ১৯৩৬ সালে মুসলমানদের দাবির মুখে সিন্ধকে বোম্বে থেকে পৃথক করে আলাদা প্রদেশের মর্যাদা দেওয়া হয়।
ইতিহাসবিদ ড. তাহির কামরান জানান, ঐতিহাসিকভাবে সিন্ধ, পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তান একই অক্ষে অবস্থিত এবং এটিই সিন্ধু সভ্যতার মূল কেন্দ্র। তিনি রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্যকে ‘জ্ঞান ও গভীরতাহীন’ বলে অভিহিত করেন।
সিন্ধ প্রদেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আমির আলি চান্ডিও এই মন্তব্যকে ‘সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিন্ধ কখনোই হিন্দুস্তান বা ভারতের অংশ ছিল না। মুঘল বা ব্রিটিশ সবার আধিপত্যের বিরুদ্ধেই সিন্ধি জনগণ লড়াই করেছে। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব এবং ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠনে সিন্ধ আইনসভার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। সিন্ধ স্বেচ্ছায় পাকিস্তানের অংশ হয়েছে, ভারতের আধিপত্য তারা কখনোই মেনে নেয়নি।’
বুদ্ধিজীবী ওয়াজাহাত মাসুদের মতে, প্রায় পৌনে এক শতাব্দী আগে দুটি পৃথক জাতি-রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। এখন এ ধরনের মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় তিক্ততা সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই করবে না।
পাকিস্তানকে ট্রেলার দেখানো হয়েছে, আসল ছবি এখনো বাকি: রাজনাথ
‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান, ভারতে ৫ হিন্দু যুবক গ্রেফতার