রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নয়, আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত খালেদা জিয়া

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫০ পিএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বেগম খালেদা জিয়ার ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ মামলার সাত বছরের দণ্ড এবং ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলার ১০ বছরের দণ্ড রাষ্ট্রপতি মওকুফ করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্ত থাকতে রাজি হননি। তিনি আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সিদ্ধান্ত নেন। শেষ পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালতে দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়ে দুটি মামলাতেই নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেকসুর খালাস পান তিনি।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, রাষ্ট্রপতির মওকুফের পরও তারা কেন আপিল শুনানি করেছেন, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ছিল। তারা বলেন, “বেগম জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতির মওকুফে ‘ক্ষমার’ বিষয়টি যুক্ত থাকে, কিন্তু খালেদা জিয়া বিশ্বাস করেন তিনি কোনো অপরাধ করেননি। তাই তিনি ক্ষমা চাননি এবং আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন আইনি পথেই এটি মোকাবিলা করতে।”

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা

২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন।

একই সাজা দেওয়া হয় মামলার অপর তিন আসামি— হারিছ চৌধুরী (প্রয়াত), জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানকে। দণ্ডপ্রাপ্তরা হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আপিল শুনানি শেষে খালেদা জিয়াসহ সবাইকে খালাস দেন।

পরে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করলে ২০২৫ সালের ৩ মার্চ সেটি খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করেন এবং অন্যদিকে দুদক সাজা বাড়ানোর আবেদন জানায়। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করেন।

২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে খালেদা জিয়াকে খালাস প্রদান করেন। 

রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, “পুরো মামলাটিই ছিল একটি ‘ম্যালিসাস প্রসিকিউশন’ বা ‘বিদ্বেষমূলক বিচার প্রক্রিয়া’। আদালত রায়ে বিচারিক ও হাইকোর্ট বিভাগের পূর্বের রায় বাতিল করে দিয়েছেন। যারা আপিল করতে পারেননি (তারেক রহমান ও কামাল সিদ্দিকী), আদালত তাদেরও খালাস দিয়েছেন।”

‘যে মামলায় কিছুই ছিল না, সেই মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ সাজা ৫ বছর থেকে ১০ বছর করেছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। মামলার মধ্যে কোনো সারবত্তাই ছিল না। অর্থাৎ বিচার ব্যবস্থা বলে কিছু ছিল না। ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে বলতো সেভাবে রায় হতো। আজ মনে হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করেছে।’

দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসানও নিশ্চিত করেন যে, আদালত মামলাটিকে প্রতিহিংসামূলক হিসেবে গণ্য করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে খালাস দিয়েছেন।

SN
আরও পড়ুন