বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দেশের প্রতি যাদের ভালোবাসা আছে, দরদ আছে তারা কখনো দেশ ছেড়ে পালায় না। বিগত দিনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ১১ জন নেতাকে আওয়ামী লীগ খুন করেছে। বিচারিক আদালতের নামে তাদেরকে হত্যা করেছে। ১১ জনের একজনও বাংলাদেশ থেকে পালায়নি, পালানোর চেষ্টা করেননি। মীর কাসিম বাইরে ছিলেন তিনিও ফেরত এসেছেন এবং আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা।’
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘যে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এদেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে, জীবন দিয়েছে, তাদের আমরা সম্মানিত করতে চাই। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই-যে বাংলাদেশে কোন বৈষম্য থাকবে না, ভেদাভেদ থাকবে না। এমন একটি রাষ্ট্র চাই-যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। দেশের যেসব মানুষের সামর্থ থাকবে না, তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবে এই রাষ্ট্র। এদেশে কোন পথশিশু থাকবে না। সব পথশিশুর দায়িত্ব নেবে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘এমন একটি রাষ্ট্র চাই যেখানে অফিস, আদালত, কোর্ট, কাচারি-কোথাও ঘুস বাণিজ্য থাকবে না, যেখানে কোন চাঁদাবাজ ও দখলদারিত্ব থাকবে না। আমাদের মা বোনেরা তাদের ইজ্জতের সঙ্গে বসবাস করবে। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ চাই-যে বাংলাদেশে প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যেকটি মানুষকে শ্রদ্ধা করবে। এমন বাংলাদেশ যদি আপনারা চান-তাহলে দরকার আপনাদের অকুন্ঠ সমর্থন ও ত্যাগ-তিথিক্ষা।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে অপার সম্ভাবনাময় ছোট একটি দেশ বাংলাদেশ। এখানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের ভাই-বোনেরা যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর ভালোবাসা নিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু মাঝে মাঝে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে বাংলাদেশের সম্প্রতি নষ্ট করতে চায়। সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু, স্বাধীনতা পক্ষে-বিপক্ষে দুটি শক্তিতে ভাগ করতে চায়। দুনিয়ার ইতিহাসে এমন কোন উদাহারণ নেই কোন জাতি বিভক্ত হয়ে সম্মানিত এবং মর্যাদা লাভ করেছে এবং তারা উন্নতির শিখরে উঠেছে। বরঞ্চ বিভক্ত জাতি বিশৃঙ্খল থাকে। ওই বিভক্তি আমাদের সর্বনাশ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিভক্তির কবর রচনা করতে চাই। এখন যারা এই বিভক্তিকে জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করবে তারা কার্যত জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবে। আমাদের এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে দেশ এবং জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতিবাদ করেছেন কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের আমরা পতন ঘটাতে পারি নাই। আমাদের ছেলে মেয়েদের নেতৃত্বে তা সম্ভব হয়েছে। অগ্রভাগে তারাই ছিল এটা আমাদের গর্বের। প্রধান উপদেষ্টা ১৭ বছর বয়সিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন। কেউ কেউ এটা মানতে চান না। আমরা বলি রাস্তায় নেমে যারা স্বাধীনতা এনেছে তারা বুক পেতে দিয়ে দিয়েছে তাদেরকে অবশ্যই ভোটার করতে হবে। যারা বুক পেতে দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিতে পারে আমরা ভোটের অধিকার দিতে পারি না?’
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে জামায়াত আমির বলেন, ‘আগে মানুষ ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে ছিল। মুখ দিয়ে কথা বলতে পারত না। স্বস্তির সঙ্গে নিজের জীবন নিয়ে চলাফেরা করতে পারত না। এখন মানুষ স্বস্তির সঙ্গে সব পারে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললেই মানুষের জীবনে বিভীষিকাময় শাস্তি নেমে আসত। সাধারণ মানুষ এবং মিডিয়ার ভাইয়েরা নির্দ্বিধায় এখন খবর পরিবেশন করতে পারে। তবে মাঝে মাঝে মিডিয়ার ভাইয়েরা ওলট-পালট করে ফেলে।’
বীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির ক্বারী আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন-কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আবদুল হালিম, দিনাজপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাদ্দিস ড. এনামুল হকসহ প্রমুখ।
মানুষ সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় চায়: জামায়াত আমির
সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু আমরা মানি না: জামায়াত আমির