ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

স্কুল ছাত্রের শহীদ মিনার ভাঙার ভাইরাল ভিডিওটি ভুয়া

‘শহীদ মিনার একটি হলেই হয়, দুইটি শহীদ মিনারের তো দরকার নেই। পুরোনো শহীদ মিনারটিও আমার (বর্তমান প্রধান শিক্ষকের) হাতেই তৈরি ১৯৮৮ সালে। তখন আমি এই স্কুলে পরীক্ষার্থী ছিলাম।’

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম

একজন স্কুল ছাত্র শহীদ মিনার ভাঙ্গছে, এমন একটি ভুয়া ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। খবর রিউমর স্ক্যানার ডটকম।

ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘ইউনুস সাহেব আপনি পারছেন, একটা গোটা প্রজন্ম কে দেশের ইতিহাস  ঐতিহ্য ধ্বংস করার জন্য।’ ফেসবুকে আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল পেজে এবং নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনসহ অনেকে এ ভিডিও শেয়ার করেছেন।

এছাড়া, উক্ত ভিডিওসহ আরো কিছু পোস্ট নেতিবাচকভাবে করা হয়েছে যেখানে শহীদ মিনার ভাঙার আসল কারণের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে ইতিহাস ঐতিহ্য ধ্বংস করার প্রেক্ষিতে উক্ত শহীদ মিনারটি ভাঙা হচ্ছে।

 

পাশাপাশি ‘অমর ২১-এর শহীদ মিনার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা’ শীর্ষক দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমেও ওই ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষার্থী কর্তৃক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার ভাঙচুরের ভাইরাল ভিডিওটি কোনো বিদ্বেষমূলক সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের অংশ নয়। বিদ্যালয়টিতে নতুন করে বড় একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করায় প্রধান শিক্ষকের অনুমতি সাপেক্ষে পুরাতন ছোট শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলা হয়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে [Sabbir3_90] নামক একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২০ ফেব্রুয়ারিতে আলোচিত ঘটনাটির আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘পাশে নতুন শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে এজন্য পুরাতন শহীদ মিনারটা ভেঙে ফেলা হচ্ছে’। উক্ত ভিডিওটিতে পাশে আরেকটি শহীদ মিনারও দেখা যায়।

ওই টিকটক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে একই বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থীর টিকটক আইডি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই শিক্ষার্থীর টিকটক আইডি পর্যবেক্ষণ করে গত ২১শে ফেব্রুয়ারিতে পোস্টকৃত একটি ভিডিওতে ২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ব্যানারসহ শিক্ষার্থীদের স্লোগানের একটি দৃশ্য পাওয়া যায়। উক্ত ব্যানারটিতে বিদ্যালয়ের নামের উল্লেখ পাওয়া যায় এবং জানা যায় যে বিদ্যালয়টির নাম হলো ‘টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়’। 

ওই টিকটক অ্যাকাউন্টে শহীদ মিনারটি ভাঙ্গার একটি দৃশ্যও প্রচার করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ‘পাশে নতুন শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে তাই পুরোনো শহীদ মিনার টা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে’।

এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে আলোচিত টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নওশের আলীর সাথে। তিনি জানান, শহীদ মিনার ভাঙার ঘটনাটি মাসখানেক আগের। ২০২৩ সালে নতুন করে বড় একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় সমস্যা হতো পুরোনো ছোট শহীদ মিনারটির কারণে। তাই ছোট পুরোনো শহীদ মিনারটি সরিয়ে ফেলতে শিক্ষার্থীরা আবেদন করলে তিনি শহীদ মিনারটি সরিয়ে ফেলার অনুমতি দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘শহীদ মিনার একটি হলেই হয়, দুইটি শহীদ মিনারের তো দরকার নেই। পুরোনো শহীদ মিনারটিও আমার (বর্তমান প্রধান শিক্ষকের) হাতেই তৈরি ১৯৮৮ সালে। তখন আমি এই স্কুলে পরীক্ষার্থী ছিলাম।’

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে কলেজ সূত্রে প্রচার করা হয়, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে কলেজের শিক্ষকরা এবং পরে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা কলেজ চত্বরের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। রাত আনুমানিক ২টার দিকে বিকট শব্দ পাওয়ার পর কলেজের নৈশপ্রহরী শহীদ মিনারের কাছে গিয়ে দেখেন তিনটি স্তম্ভের দুটি ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।

সুতরাং, নতুন করে বড় একটি শহীদ মিনার ইতোমধ্যে তৈরি হওয়ায়, পুরোনো ছোট শহীদ মিনারটি প্রধান শিক্ষকের অনুমতি সাপেক্ষে ভেঙে ফেলার ঘটনাকে বিদ্বেষমূলক সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

NC
আরও পড়ুন