পবিত্র রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর সূর্যাস্তের সময় ইফতারের মাধ্যমে প্রতি রোজার সমাপ্তি ঘটে। সেক্ষেত্রে ইফতার রোজা শেষ করার অন্যতম অনুষঙ্গ। ফলে ইফতারে থাকে মুষলিদের নানা আয়োজন। কোথাও কোথাও অতিরিক্ত ইফতার আয়োজনে অনেক খাবার নষ্ট হচ্ছে।
আমরা যখন খাবার নষ্ট করছি তখন পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ না খেয়ে রয়েছেন। ক্ষুধা নিবারণের সামান্য খাবার নেই তাদের। দুনিয়ার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরেও পরকালে আল্লাহ তায়ালার কাছে অপচয়ের শাস্তির বিষয়ে ভয় করা উচিত। মুমিন হিসেবে ইফতারেও রাসূল (সা.) এর দেখানো পথ অনুসরণ করা আবশ্যক।

রমজানে অনেকের দৃষ্টি নিবন্ধ থাকে ফ্রিজে খাবার স্তুূপ করে রাখার মধ্যে। যেন তারা মান্থ অব ফাস্টিং অর্থাৎ রোজার মাস পালনের পরিবর্তে মান্থ অব ফিস্টিং (ভোজনের মাস) উদযাপন করছেন।
আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৩২)
রমজান মাসে খাবারের এতো বেশি আয়োজন করতে গিয়ে আমাদের ঘরের নারীদের সময় নষ্ট হয়। রমজানের বেশির ভাগ সময় তাদের রান্নাঘর ও খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত থাকতে হয়। সারা দিন কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ফলে তারা ইবাদতে মনোযোগ দিতে পারেন না শুধুমাত্র আমাদের বাহারি আয়োজনের জন্য।

অন্য হাদিসে ভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) (মাগরিবের) নামাজের আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত, তবে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি শুকনা খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন। ( মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৩/১৬৪)
এই হাদিসগুলোর মাধ্যমে রাসূল সা.-এর ইফতারের চিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। অথচ আমরা কেউ তা অনুসরণের চেষ্টা করি না। রমজান মাস এলে আমাদের বাসা-বাড়িতে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। রমজানে অনেকের দৃষ্টি নিবন্ধ থাকে ফ্রিজে খাবার স্তুূপ করে রাখার মধ্যে। যেন তারা রোজার মাস পালনের পরিবর্তে ভোজনের মাস উদযাপন করছেন।

রাসূল সা. বলেছেন, দুনিয়াতে যাদের পেটগুলো পূর্ণ থাকবে কেয়ামতের দিন তারা সব থেকে বেশি ক্ষুধার্ত থাকবে। (আল জামিউস ছাগির, হাদিস : ২২১১)
এই হাদিস শোনার পর থেকে বর্ণনাকারী যুহাইফা রা. ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত আর কখনো পেট ভরে খাবার গ্রহণ করেননি। ( আল মুজামুল আওসাত লিত তাবারানি, ৮/ ৩৭৮)
ইমাম আহমদ রহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, পেট মোটা কোন মানুষের অন্তর কি নরম হতে পারে? তিনি জবাবে বলেছিলেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না।
