নেপালে বিলুপ্ত ঘোষণা করা রাজতন্ত্রকে পুনরায় চালুর দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হাজার হাজার মানুষ। একইসঙ্গে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘হিন্দু ধর্মকে’ ঘোষণার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
রোববার (৯ মার্চ) নেপালের সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানাতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন উপস্থিত জনতা। এ সময় ‘রাজার জন্য রাজপ্রাসাদ খালি করুন’, ‘রাজতন্ত্র ফেরত চাই’, ‘হিন্দু ধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হোক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা জানান, দেশের অবনতি ঠেকাতে রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছিলেন তারা। দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সংকট ও ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে প্রজাতন্ত্র। তাই এই বিক্ষোভের ডাক দেয়া।
এক বিক্ষোভকারী বলেন, আমি এখানে এসেছি রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে। রাজাকে তার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে। রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে হিন্দু ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করতে।
২০০৬ সালে রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল, তাতে অংশ নিয়েছিলেন ৫০ বছর বয়সী রং মিস্ত্রি কুলরাজ শ্রেষ্ঠ। নেপালের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি হতাশ হয়ে নিজের সিদ্ধান্ত বদলের কথা বলছেন তিনি।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদরা দেশের জন্য কিছুই করছেন না। আমার মনে হচ্ছে, রাজতন্ত্র বিলোপের বিক্ষোভ-প্রতিবাদে অংশ নেওয়াটা ভুল ছিল। দেশ আরও ডুবে গেছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি।

তবে রাজতন্ত্র পুনরায় চালু করার বিষয়ে জনগণের আহ্বান নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি জ্ঞানেন্দ্র শাহ। দেশটিতে সাবেক এই রাজার পক্ষে ক্রমবর্ধমান সমর্থন থাকলেও অবিলম্বে তার ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
২০০২ সালে নেপালের রাজা হন জ্ঞানেন্দ্র শাহ। ২০০৬ সালে দেশজুড়ে তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। এর দু'বছর পর দেশটির সংসদে রাজতন্ত্রকে বিলুপ্তির জন্য ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের ভোটে নেপালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরে রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ সাধারণ জীবনযাপনের লক্ষ্যে কাঠমান্ডুর রাজপ্রাসাদ ছেড়ে চলে যান। নেপাল হয় ধর্মনিরেপক্ষ রাষ্ট্র।
২০০৮ সালে নেপালে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘোষণা পর থেকে অন্তত ১৩টি সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তবে, মানুষের ভাগ্যের কোনো উন্নতি হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
