ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

২ শতাধিক সাপের কামড় খাওয়া ব্যক্তির রক্ত এখন শক্তিশালী এন্টিভেনম

আপডেট : ০৩ মে ২০২৫, ০৮:৪৮ পিএম

বিজ্ঞান ও চিকিৎসা জগতে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘটাতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের টিম ফ্রিড নামের এক সাহসী যুবকের রক্ত। প্রায় দুই দশক ধরে ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই শতাধিক প্রাণঘাতী সাপের কামড় ও সাত শতাধিক বিষ ইনজেকশন গ্রহণ করে নিজের শরীরে তৈরি করা অ্যান্টিবডি দিয়ে তিনি বিজ্ঞানীদের হাতে তুলে দিয়েছেন এক অনন্য উপহার। বিশ্বের প্রথম কার্যকর ও সম্ভাব্য সর্বজনীন অ্যান্টিভেনম। 

টিম ফ্রিডের গল্প যেন সিনেমার চিত্রনাট্য- সাবেক এক ট্রাক মেকানিক, যিনি প্রথমে ইউটিউব ভিডিও তৈরির জন্য সাপের কামড়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করেছিলেন। সেই চেষ্টা আজ তাকে এনে দিয়েছে ‘মানব এন্টিভেনম’ খ্যাতি।

টিম ফ্রিড মাম্বা, কোবরা, তাইপান, ক্রেইটসহ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষধর সাপের কামড় সহ্য করেছেন। প্রথমদিকে তার এই চেষ্টার ভয়াবহ ফলও তাকে ভোগ করতে হয়েছিল। দুটি কোবরার কামড়ে তিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। নিজের ভাষায়, ‘আমি মরতে চাইনি, আঙুল হারাতে চাইনি, কাজ মিস করতে চাইনি।’

বিবিসি জানিয়েছে, ফ্রিডের রক্ত থেকে সংগ্রহ করা এন্টিবডি প্রাণীর ওপর পরীক্ষায় বিভিন্ন প্রজাতির সাপের মারাত্মক বিষের বিরুদ্ধে সফলভাবে কাজ করেছে। 

বর্তমানে ব্যবহৃত এন্টিভেনম সাধারণত একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের জন্য কার্যকর, ফলে চিকিৎসায় সীমাবদ্ধতা থাকে। কিন্তু টিম ফ্রিডের রক্তে তৈরি অ্যান্টিবডি একাধিক প্রজাতির সাপের বিষ প্রতিরোধে সক্ষম হওয়ায়, চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রথমবারের মতো সর্বজনীন এন্টিভেনমের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

টিম ফ্রিডের লক্ষ্য শুধুই নিজের সুরক্ষা ছিল না। তিনি বলেন, ‘এটা এখন শুধু আমার জীবনযাত্রার অংশ নয়, এটা মানবতার জন্য। যারা আমার থেকে আট হাজার মাইল দূরে সাপের কামড়ে মারা যায়, তাদের জন্য আমি এগিয়ে যেতে থাকি।’

তার এই আত্মত্যাগ বিজ্ঞানীদের কাছে এক বিশাল সম্পদে রূপ নিয়েছে। গবেষকরা এখন টিম ফ্রিডের রক্ত থেকে সংগ্রহ করা অ্যান্টিবডির ক্লোন তৈরি করে ওষুধ আকারে সর্বসাধারণের জন্য কার্যকর অ্যান্টিভেনম তৈরির চেষ্টা করছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৫৫ লাখ মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়, যাদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায় এবং প্রায় ৪ লাখ মানুষ পঙ্গু হয়ে যায়। সর্বজনীন এন্টিভেনম কার্যকর হলে এ বিপুল প্রাণহানি ও অঙ্গহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব হবে।

AHA
আরও পড়ুন