চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) গবেষকরা পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য পরিবেশ দূষণ রোধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, চবিকে গ্রীন ক্যাম্পাসে পরিণত করা এবং বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ছোট-বড় প্রায় ৮৬ টি স্পট থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ডাম্পিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে আধুনিক পদ্ধতিতে বর্জ্য থেকে তৈরি করা হবে কম্পোস্ট সার ও পুনঃব্যবহারযোগ্য জ্বালানি তেল। সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্জ্য সংগ্রহ স্থলগুলোতে গড়ে তোলা হবে ফুলের বাগান, যা ক্যাম্পাসকে করবে আরও মনোমুগ্ধকর ও পরিবেশবান্ধব।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত থাকবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিভাগ এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সাত সদস্যের পরিকল্পনা প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আল আমিন, কমিটির সদস্য সচিব উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান।
সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন, মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন, শাহ আমানত হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. গোলাম কিবরিয়া, বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মুহাম্মদ শামসুল হুদা ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফুল হক সিদ্দিকী।
কমিটির প্রাথমিক সুপারিশ :
এই প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ছোট-বড় মোট ৮৬টি স্পট থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে এবং সেগুলো একটি কেন্দ্রীয় ডাম্পিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে। নতুন সেন্ট্রাল ডাম্পিংটি হবে অতীশ দীপঙ্কর হল সংলগ্ন বর্তমান ডাম্পিং সাইটের উত্তর পাশে। সেখানে আধুনিক পদ্ধতিতে বর্জ্যকে তিনটি ভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হবে। এখান থেকেই বর্জ্যগুলোকে পচিয়ে তৈরি করা হবে প্রয়োজনীয় কম্পোস্ট সার এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য জ্বালানি তেল। শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই নয়, সৌন্দর্য বর্ধনের দিকেও থাকছে বিশেষ নজর। বর্জ্য সংগ্রহের এলাকাগুলোতে গড়ে তোলা হবে সুসজ্জিত ফুলের বাগান, যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরও বাড়াবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হবে। পুরো ক্যাম্পাসে মাইকিং, ব্যানার ফেষ্টুনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে তৈরি করা হবে সচেতনতা।
শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে খণ্ডকালীন চাকুরি সুবিধা:
পুরো প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্জ্য সংগ্রহের কাজ থেকে শুরু করে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ পর্যন্ত সবকিছুতেই শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকবে। এই উদ্যোগটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অর্থপূর্ণ পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই কাজের জন্য যে অর্থ সাধারণত বাইরের কাউকে দেওয়া হতো, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে এতে করে একদিকে যেমন প্রকল্পটি পরিচালনা সহজ হবে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও আর্থিকভাবে উপকৃত হবে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবে।
বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আল আমিন বলেন, আমাদের লক্ষ্য শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বর্জ্যকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনা তা নয় এটির সাথে যুক্ত যে গবেষণাগুলো রয়েছে এগুলোকে আমরা ছাত্র, শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য তুলে ধরবো। আগামী দিনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি আইডিয়াল ইনস্টিটিউশন হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। যদি আমরা এই প্রোগ্রামটিকে সফলভাবে শেষ করতে পারি। এই উদ্যোগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে, যেখানে বর্জ্য আর সমস্যার উৎস নয় বরং সম্ভাবনার একটি সম্পদ।
উপ-উপাচার্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে জিরো প্লাস্টিক ক্যাম্পাসে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি। সংগ্রহ করা প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করে সিরামিক পণ্য তৈরির কাজ করা হবে, যা পরিবেশবান্ধব ও সৃজনশীল। এ লক্ষ্যে অতিশ দীপঙ্কর হলের পাশে একটি নান্দনিক ডাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হবে, যা শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নয়, শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষণীয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠবে। এই কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, সবুজ ও সচেতন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা।
