ঢাকা
বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

হাসপাতাল যেন রোগীর হাট

আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৫, ১২:৪০ পিএম

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে রোগী বেচাকেনার হাটে পরিণত করেছে ডায়াগনস্টিকের দালাল ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এ যেন রোগী ভাগানোর মহোৎসব। রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছে নাজিরপুর হাসপাতাল এক হয়রানি ও বিরক্তির জায়গা নিয়ে গেছে এই চক্র। চক্রটির কাছে রোগীদের পাশাপাশি ডাক্তাররাও অসহায়, যেখানে রাজত্ব চলে ডায়াগনস্টিকের দালাল ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের।

চক্রটি হাসপাতালে উপস্থিত থেকে রোগী ভাগিয়ে ক্লিনিকে পাঠানো কিংবা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া অথবা প্রয়োজনীয় প্রেসক্রিপশনের ওষুধের জন্য ফার্মেসি সবই নির্ধারিত থাকে তাদের।

সেবা নিতে আসা এক রোগী বলেন, রোগী কোন ডাক্তার, কোন ল্যাবে টেস্ট হবে সব কিছু ঠিক করে দেন এক ব্যক্তি। সিজারিয়ান এক নারীর স্বজনকে দালাল চক্র বলে, হাসপাতালে সিজার হয় না ক্লিনিকে জানান। এছাড়া মূমূর্ষ এক রোগীকে রক্ত দেওয়ার জন্য হাসপাতালের ডাক্তারের রুমে যেতে বাধা সৃষ্টি করেন।

এক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির বিরুদ্ধে এমন সব ভয়ানক তথ্য আসে সাংবাদিকদের হাতে।

এ তথ্যের সত্যতা জানতে সাংবাদিকরা সরজমিনে গিয়ে দেখেন, নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে ডায়াগনস্টিকের ২৫-৩০ সদস্যের একটি দালাল চক্র ও ২০টির বেশি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে। দালাল চক্রটির বেশির ভাগই মহিলা। তাদের বয়স ২৫-৪৫ এর মধ্যে। এই চক্রোটি এতোটা বেপরোয়া যে তারা হাসপাতাল কতৃপক্ষকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের রাজত্ব। তথ্য সংগ্রহ কালে সাংবাদিকদের উপরে চড়াও হয়ে ওঠে। উপজেলায় একটি মাত্র সরকারি হাসপাতাল থাকায় প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা দরিদ্র ও অসহায় রোগীদের ও তাদের স্বজনদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এই সমস্ত দালালরা।

রোগীদের প্রেসক্রিপশন দেখার জন্য হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়ছেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। হাসপাতালের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে ভেতরের প্রতিটি রুম পর্যন্ত পুরো হাসপাতালের দালালদের ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবাধ বিচরণ ও আধিপত্য দেখা যায়। উপজেলা হাসপাতালে পা ফেললেই দালালদের মুখোমুখি হতে হয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় দরিদ্র ও অসচ্ছল রোগী ও স্বজনদের।

দেখা যায়,  এ সমস্ত মহিলা ও পুরুষ দালালরা হাসপাতালের সামনে থাকা ২০ ফুট দূরে অবস্থিত ৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেতনভুক্ত অথবা রোগী ভাগানোর উপর নির্ভর করে তাদের পার্সেন্টেজ নেন বলে জানা যায়। হাসপাতালের সামনেই মাত্র ২০ ফুট দুরত্বে অবস্থিত ৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরাই এই সমস্ত দালালদের নিয়মিত দেখভাল করেন।

কয়েকজন হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরা বলেন, দালালরা প্রথমে হাসপাতালে রোগী সেজে পরিচয় দেন। আবার কেউ কেউ হাসপাতালের কর্মী ও পরিচয় দেন। এই সমস্ত দালালরা প্রথমে হাসপাতালের অবস্থাপনার কথা বলে এবং হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ভালো হয় না অথবা হাসপাতালের মেশিন নষ্ট বলে তাদের ভাগিয়ে নিয়ে যান নিজেদের কর্ম স্থল ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে।

হাসপাতালের নৈশপ্রহারী জানান, ল্যাবের লোকজন এসে ডিস্টার্ব করে রোগীদের। দালালদের তাড়িয়ে দিলেও তারা আবার আসে। আমাকে বলে, ‘তুমি কে?’। রোগী নিয়ে যায় ল্যাবে। আমার কথা তারা শোনে না।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকা এক কর্মচারী বলেন, নাইটগার্ডকে আমরা দাড় করিয়ে রেখেছি। কিন্তু ওকে মানতে চায় না, ঢুকে পড়ে। ওর পাশাপাশি আমরাও প্রতিবাদ করি। প্রশাসনকে জানালে তারা মাঝে মাঝে আসে তাদেরকে (দালাল) তাড়ানো চেষ্টা করে। প্রশাসন আসলে তারা (দালাল) থাকে না।

নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, কোনো কিছুই প্রশাসন দিয়ে কন্ট্রোল সম্ভব না। এটা একটি সামাজিক আন্দোলন সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। হাসপাতালে সকল ধরনের টেস্ট হয়। আমাদের হাসপাতালে ম্যান পাওয়ারের কারণে কিছু রোগী বাহিরে যায়। দালালদের বিরুদ্ধে বরিশাল বিভাগে ও পিরোজপুর জেলায় বিভিন্ন সময় মোবাইল কোট চালানো হয়েছে আমরা ও প্রশাসন তৎপর আছি। সমাজের সবাই এগিয়ে আসলে নাজিরপুরবাসী আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালো স্বাস্থ্য সেবা পাবে।

নাজিরপুর উপজেলা  প্রসাশনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলা হয়, দালাল চক্র ও অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অভিযান চালানো হবে।

তথ্য আছে ফিটনেসবিহীন এই সব ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন, নেই লাইসেন্সসহ পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার পেছনে রয়েছে একটি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা শঙ্কায় থাকেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ব্যবহার করা কাঁচামাল নিয়ে।

NJ
আরও পড়ুন