দীর্ঘদিনের স্থবির সম্পর্ক ছিন্ন করে ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে, রোববার (২৪ আগস্ট) বৈঠকে বসছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিককরণে বাংলাদেশ জোর দিতে পারে, অন্যদিকে ইসলামাবাদ সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার বার্তা দিতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈঠকটি দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে প্রথমে একান্তে এবং পরে প্রতিনিধি পর্যায়ে। বৈঠক শেষে পাঁচ থেকে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈঠকে আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষিখাত, জনসংযোগ সহজীকরণ, ফরেন সার্ভিস একাডেমির সহযোগিতা, সংস্কৃতি বিনিময়, এবং দুই রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সমঝোতা। বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি হতে পারে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা বিলোপ সংক্রান্ত।
একইসঙ্গে, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (BIISS) এবং পাকিস্তানের ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (IPRI) মধ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের পরিকল্পনাও রয়েছে।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সম্পর্কোন্নয়নের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ঢাকা মনে করে, ১৯৭১ সালের গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদের ন্যায্য হিস্যা প্রদান- এই তিনটি ঐতিহাসিক অমীমাংসিত ইস্যু নিষ্পত্তি হওয়া আবশ্যক।
এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, এই ইস্যুগুলো ভুলে যাওয়া হয়নি। সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ হিসেবে এগুলো আলোচনার টেবিলে আসতেই পারে। তবে কোন ইস্যু কতটা জোর দিয়ে তোলা হবে, তা বৈঠকে নির্ধারণ হবে।
সম্প্রতি বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠক এবং কিছু দৃশ্যমান অগ্রগতি পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ককে নতুন দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল: ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের করাচি থেকে একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে যা দুই দেশের মধ্যে প্রথম।
ভিসা সহজীকরণ: বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিদেশিদের জন্য ভিসা পাওয়ার নিয়ম সহজ করেছে। পাকিস্তানও বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা চার্জ মওকুফ করেছে।
সরাসরি বিমান চলাচলের উদ্যোগ: দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে নিউইয়র্ক ও মিশরে দুইবার সাক্ষাৎ করেছেন। এর পাশাপাশি, গত এপ্রিলে দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন আমনা বালুচ।
সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ বিকেলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ইসহাক দার। সফরের প্রথম দিনেই তিনি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের পর এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে এলেন। ইসহাক দারের পূর্বনির্ধারিত সফর ছিল গত ২৭ এপ্রিল, তবে ভারতের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার কারণে সেই সফর স্থগিত করা হয়।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এক যুগ পর এই সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। তবে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ঐতিহাসিক দায় ও অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান ছাড়া এগোনো কঠিন হবে বলে তারা মনে করছেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কী আলাপ হলো রাজনৈতিক দলগুলোর
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
ঢাকায় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী