লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলার প্রায় ৮০ শতাংশ সড়কের বেহাল দশা। দীর্ঘদিন ধরে সড়কগুলো সংস্কারবিহীন থাকায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
সড়কগুলো সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন এমনকি সড়ক বিভাগের গায়েবানা জানাজা পড়েও কোন সুফল পায়নি ভুক্তভোগীরা। বারবার আন্দোলনের হুমকি দিলেও টনক নড়েনি সড়ক বিভাগের।
খানাখন্দে ভরা সড়কে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, রোগী, কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই সড়ক মেরামত হচ্ছে না বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কের ভাঙ্গা অংশে ইট দিয়ে সলিং করে চলাচল উপযোগী করার চেষ্টা করছে সড়ক বিভাগ। তবে এই কাজকে তামশা বলছেন সড়কে চলাচলকারীরা।
এরই মধ্যে লক্ষ্মীপুর-জকসিন সড়কের দূরাবস্থায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর ‘গায়েবানা জানাজা’ আয়োজন করে অভিনব প্রতিবাদ জানান। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক সংস্কার না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
জেলার প্রায় সকল সড়কে দেখা যায়, কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্ত। সিএনজি আটকে গিয়ে যাত্রীদের নেমে ঠেলে গাড়ি বের করতে হচ্ছে। এমন দৃশ্য এখানে প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য সড়ক যেন যুদ্ধের ময়দান।

বৃষ্টির দিনে কেউ পলিথিনে মোড়ানো বই নিয়ে হাঁটে, কেউ পা পিছলে পড়ে যায় কাদায়। জেলার গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-লক্ষ্মীপুর প্রধান সড়ক, দালালবাজার-মীরগঞ্জ, পৌরসভার ৯০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ রাস্তা এবং সদর উপজেলা, রামগঞ্জ, রায়পুর ও কমলনগরের ৮০ ভাগ সড়কেরই একই অবস্থা।
সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কটির ৪ লেনের কাজ দ্রুত শুরু করার দাবিতে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী লক্ষ্মীপুর শহর ও চন্দ্রগঞ্জ শাখা। এ সময় বাংলাদেশ জামাত ইসলামের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম দ্রুত সড়কের কাজটি শুরু না হলে বৃহত্তর আন্দোলন করার ঘোষণা দেন।
স্কুলবাস চালক মিরন আলী বলেন, প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাতে হয়, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে বের হলেই অভিবাবকরা আতঙ্কে থাকেন। প্রতিনিয়ত ফোন করে খোঁজ-খবর নেন তারা। আমরা আতঙ্কিত হয়ে এ সড়কে চলাচল করছি।
মো. সোহান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, কষ্ট করে স্কুলে যেতে হয়। সাইকেলে করে স্কুল যাওয়ার সময় রাস্তার গর্তে মাঝে মাঝে পড়ে যাই। এতে স্কুল ড্রেস এবং বই খাতা ভিজে নষ্ট হয়। তাই দ্রুত সড়কগুলো সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক আরমান হোসাইন বলেন, লক্ষ্মীপুরের বেশিরভাগ সড়কই চলাচলের অনুপযোগী। দীর্ঘদিন যাবত কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না কর্মকর্তারা।
জানা গেচে, চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে সবশেষ ২০১৭ সালে কার্পেটিং করা হয়। যানবাহনের চাপ, বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে খানাখন্দ ও ফাটল দেখা দিয়েছে। পুরো সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের।
গত বছর সড়কের সদর উপজেলার হাজিরপাড়া, মান্দারী, জকসিন, পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন, ইসলাম মার্কেট, বাসটার্মিনাল এলাকায় পিচ ঢালাই দিয়ে কার্পেটিং করা হয়। কিন্তু বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ওই সব স্থানে চলতি মাসের শুরুতে ইটের সলিং করা হয়।
এই সলিংয়ের ওপর দেওয়া বালু ও ভারি যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ইট ভেঙে ধুলাবালিতে একাকার হয়ে পড়েছে পরিবেশ। সড়কের দুই পাশের গাছগাছালি ও ফসলি জমি বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। ধুলাবালি রোধে পানি ছেটানোর নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিলান থেকে চন্দ্রগঞ্জ বাজার পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর অংশে ১৮ কিলোমিটার সড়কের ৪ লেনের ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)’ জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি টেন্ডারসহ প্রক্রিয়া হলে চার লেনে ২৪ ফুট করে ৪৮ ফুট এবং মাঝখানে ডিভাইডার হবে।
এছাড়া বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদপুর রুটের রায়পুরে বর্ডার অংশে পিএমপি (মেজর সড়ক) প্রকল্পের জন্যেও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। তবে কবে নাগাদ এ প্রকল্প অনুমোদন হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
সদ্য যোগদান করা লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে সড়কগুলো মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টি কমে গেলেই সড়ক মেরামত শুরু হবে।
লক্ষ্মীপুরের সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের কার্যক্রমকে আরও স্মার্ট করা হবে।
রামুতে সড়ক দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু 