ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

আত্মীয় জালেম হলে যেভাবে আচরণ করতে শেখায় ইসলাম

আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০০ পিএম

ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে বাস্তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যেখানে কোনো আত্মীয় অন্যায়কারী বা জালেম হয়ে ওঠে। এই ক্ষেত্রে ইসলাম আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ ও প্রজ্ঞাময় দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। ইসলামের মূল নীতি হলো, আত্মীয়-স্বজনে সঙ্গে সর্বোত্তম আচরণ করা।

সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না
আত্মীয় জালেম হলেও সম্পর্ক ছিন্ন করা যায় না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং সম্পর্ক ছিন্ন করে ও ফাসাদ সৃষ্টি করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৭)
অর্থাৎ আত্মীয়ের অন্যায় আচরণের কারণে সম্পর্ক বন্ধ করা ইসলামের শিক্ষা নয়।

মন্দের বিপরীতে ভালো আচরণ
পবিত্র কোরআনে নির্দেশ আছে, ‘ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে শত্রুও হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (সুরা হা-মিম-সাজদা : আয়াত ৩৪)
অতএব, অন্যায়ের জবাব অন্যায় দিয়ে নয়, বরং সদাচরণ ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে দিতে হবে।

ন্যায় ও উপদেশের দায়িত্ব
অন্যায়কে চুপচাপ দেখা উচিত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকুক যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকে, সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। তারাই সফলকাম।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৪)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন উত্তমভাবে।’ (সুরা নাহল : আয়াত ১২৫)
অতএব, আত্মীয় জালেম হলেও মৃদুভাবে উপদেশ দেওয়া কর্তব্য।

উত্তম আচরণ বজায় রাখা
উপদেশ কার্যকর না হলেও খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ক্ষমা করুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদের এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৯৯)

হাদিসে পাকে এসেছে, ‘এক বৃদ্ধা মহিলা নবীজিকে কষ্ট দিতেন। তিনি অসুস্থ হলে নবীজি তার খোঁজ নেন এবং উত্তম আচরণের মাধ্যমে বৃদ্ধাকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী করেন।’
এটি শেখায়—দয়া, সহমর্মিতা ও সদাচরণই প্রকৃত সমাধান।

নিজের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষা
ইসলাম অন্যায়কারীর সামনে অসহায় থাকার শিক্ষা দেয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।’ (সুরা রাদ : আয়াত ১১)
অতএব, আত্মীয় জুলুমের স্বীকার হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। যেমন-
> দূরত্ব বজায় রাখা
> অন্যায় কাজে সহযোগিতা না করা
> শরিয়াহসম্মত উপায়ে ন্যায়বিচার চাওয়া

বাস্তব কর্মকৌশল
> দোয়া করুন: আল্লাহর কাছে তাদের হেদায়েতের জন্য প্রার্থনা করুন।
> সীমিত যোগাযোগ রাখুন: শুধুমাত্র মৌলিক দায়িত্বের সম্পর্ক বজায় রাখুন।
> ধৈর্য ধরুন: ধৈর্য হলো মুমিনের সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্র।
> ন্যায়পরায়ণ হোন: অন্যায় কখনো আপনার অন্যায়ের অজুহাত হতে পারে না।

আত্মীয় জালেম হলে ইসলামের দিকনির্দেশনা হলো- সম্পর্ক ছিন্ন না করে ন্যূনতম সম্পর্ক বজায় রাখা, অন্যায়কে সমর্থন না করা, প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ দেওয়া, উত্তম আচরণ প্রদর্শন করা এবং নিজের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। চূড়ান্ত লক্ষ্য প্রতিশোধ নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা এবং অন্যায়কারীর সংশোধনই মূল উদ্দেশ্য।

MMS
আরও পড়ুন