ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সূর্যোদয়ের সময় দুই রাকাত নফল নামাজের ফজিলত

আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৬ এএম

মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া অবশ্য। এই পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ মুসলিম পরিচয় ধারণের অপরিহার্য শর্ত। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু নফল নামাজ আছে, যেগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে মানুষের সৌভাগ্যের আরও কিছু দ্বার। যে নামাজ আদায় করলে হওয়া যাবে প্রভুর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা।

তেমনি একপ্রকার নামাজ হলো ‘সালাতুল ইশরাক’ বা সূর্যোদয়ের পর মুহূর্তের নামাজ। আরবিতে সূর্যোদয়ের সময়কে বলে ‘ইশরাক’। সালাতুল ইশরাক একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত। নবী করিম (সা.) সফরে বা শহরে- সবখানেই এই নামাজ আদায়ের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সাহাবাদেরও আদেশ করেছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘প্রিয়নবী (সা.) আমাকে তিনটি জিনিসের আদেশ করেছেন। আমি কিছুতেই সেসব অবহেলা করতে পারি না। বিষয়গুলো হচ্ছে-প্রতি মাসে কমপক্ষে তিন দিন রোজা রাখা, ঘুমের আগে বিতর নামাজ আদায় করা এবং সফরে-শহরে যখন যেখানে থাকি নিয়মিত সালাতুল ইশরাক আদায় করা।’ (বুখারি : ২৫৬)

প্রতি মুহূর্তে আমরা আল্লাহর কত নেয়ামত উপভোগ করি! সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁর কত ফজলে আমরা ডুবে থাকি। সেগুলোর বিনিময় তো পরের কথা, একটা একটা করে সবগুলোর কৃতজ্ঞতা আদায়ও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তা হলে আমরা কী করব! এ বিষয়টিই এক হাদিসে এভাবে উঠে এসেছে-‘বান্দা ভোরে ঘুম থেকে এমন অবস্থায় উঠে যে, তার প্রতিটি গ্রন্থির ওপর আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা ওয়াজিব থাকে। কিন্তু তার পক্ষে তা সম্ভব নয়। তাই সে যদি দুই রাকাত সালাতুল ইশরাক আদায় করে তা হলে তার ওপর থেকে সব কৃতজ্ঞতা আদায় হয়ে যায়।’ (আবু দাউদ : ৫২৪৩)

আমরা যদি আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের খাতায় নিজেদের নাম লেখাতে চাই তা হলে অবশ্যই আমাদেরও এই নামাজ আদায় করতে হবে। কেননা এটি হচ্ছে আল্লাহর প্রিয় নামাজ এবং প্রিয় বান্দাদের নামাজ। এই নামাজ আদায়কারীদের জন্য আল্লাহ জান্নাতে অট্টালিকা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্বাহ্নের প্রথম প্রহরে বারো রাকাত সালাতুল ইশরাক আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।’ (তিরমিজি : ৪৪৩)

তবে হ্যাঁ, এই প্রতিদানটি পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই কষ্ট করে বারো রাকাত সালাত আদায় করতে হবে। কারণ প্রতিদান যত বড়, আমলও তত বড় হওয়া কাম্য। অন্যান্য ফজিলত অর্জনের জন্য এই শর্তটি নেই। সালাতুল ইশরাকের ফজিলত ও ফায়দা তো আসলে অনেক। দিনের শুরুতে আমরা চার রাকাত সালাতুল ইশরাক আদায় করে দিনের শেষ পর্যন্ত অর্জন করতে পারি প্রভুর পক্ষ থেকে এক অদৃশ্য নিরাপত্তা। যা মানুষের ক্ষতি, পথের দুর্ঘটনা ও যাবতীয় মন্দ থেকে বাঁচিয়ে আমাদের নিয়ে যেতে পারে একটি নিরাপদ পরিবেশে, দান করতে পারে একটি প্রশান্তির দিন।

যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! দিবসের সূচনায় তুমি আমার জন্য চার রাকাত সালাতুল ইশরাক আদায় করো, দিবসের সমাপ্তি পর্যন্ত তোমাকে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমি নেব’ (ইবনে হিব্বান : ২৫৩৩)। সুবহানাল্লাহ! মহান রবের পক্ষ থেকে এমন নিরাপত্তার ঘোষণার পরও আমরা কীভাবে সালাতুল ইশরাক থেকে পিছিয়ে থাকতে পারি!

সালাতুল ইশরাকের আরেকটি মহান ফজিলত বয়ান করতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করবে, অতঃপর আল্লাহর জিকির করবে বসে বসে সূর্য উঠা পর্যন্ত, তারপর দুই রাকাত সালাতুল ইশরাক আদায় করবে, তার জন্য থাকবে একটি পূর্ণ হজ এবং পরিপূর্ণ ওমরাহর সমপরিমাণ প্রতিদান।’ (তিরমিজি : ২৭৯)

তবে মনে রাখতে হবে সালাতুল ইশরাক পড়া হলো সুন্নত এবং এর সময় শুরু হয় সূর্য পরিপূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর। সালাতুল ইশরাকের নিয়ম-কানুন অন্যান্য নামাজের মতোই। তবে এটি পড়তে হবে দুই রাকাত দুই রাকাত করে। আমরা তো চাই হজ করতে, না পারলেও অন্তত হজের সমান প্রতিদান লাভ করতে, চাই একটি নিরাপদ জীবনযাপন এবং আমরা চাই কৃতজ্ঞচিত্তে আল্লাহর বিনয় বান্দা হয়ে বেঁচে থাকতে। তাই চলুন! আমরা এই চাওয়াগুলো পূরণের অপূর্ব মাধ্যম সালাতুল ইশরাক আদায়ের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, সংকল্প করি হৃদয়ে! আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। (আমিন)

MH/AHA
আরও পড়ুন