ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ড্রাগন চাষে স্বাবলম্বী মানিকগঞ্জের নূর মোহাম্মদ

আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:২১ পিএম
কৃষি মানে শুধু চিরাচরিত ফসল নয়; সাহস, জ্ঞান ও প্রযুক্তির সংমিশ্রণ বদলে দেবে আমাদের দেশের অর্থনীতি। সেই চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করে তাক লাগিয়েছেন মানিকগঞ্জের নূর মোহাম্মদ। সদর উপজেলার কৃষ্ণপুরে শখের বসে ড্রাগন ফলের বাগান করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন এই ড্রাগন ফল চাষি। 
 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোরের সূর্যের আলো এসে পড়ছে সবুজ গাছের লতার উপর। এ যেন এক প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। স্বপ্ন দেখলেই সব সময় বাস্তবে রূপ দেওয়া অসম্ভব হয় না। তবে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন মানিকগঞ্জের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রাজিবপুর এলাকার নূর মোহাম্মদ। বাগানটি দেখলে মনে হবে বিদেশি কোনো ফল বাগান। কিন্তু এটি এখন দেশের মাটিতেই চাষ হচ্ছে। ২০২০ সালে প্রচলিত চাষের ধারা ভেঙে প্রতিকূলতা পেরিয়ে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেন নূর মোহাম্মদ।
 
 
শুরুতে আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনায় করে শুরু করেন ড্রাগন বাগান। ১০০ শতাংশ জমিতে এই ড্রাগন বাগান শুরু করেন। এই বাগানটিতে সারি সারি কাঁচা-পাঁকা বিভিন্ন আকারের সহস্রাধিক ড্রাগন ফল শোভা পাচ্ছে। তবে এই বাগানের শুরুর দিকে প্রতিবেশীসহ এলাকার মানুষ তাকে পাগল বলে মন্তব্য করেছেন। সেই একটি বাগান থেকে আজ তিনি একাধিক ড্রাগন বাগানের মালিক হয়েছেন।
 
বাজারের ড্রাগন ফলের চেয়ে মিষ্টি এবং সুস্বাদু হওয়ায় তার বাগানের ড্রাগনের চাহিদাও অনেক বেশি। অনেকেই বাগানে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলেও নূর মোহাম্মদ এই বাগানে সম্পূর্ণ জৈব সার ব্যবহার করছে। একেকটি ড্রাগন বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় করেন নূর মোহাম্মদ। মাঠ পর্যায়ের সব ধরনের পরামর্শসহ সার্বিক সহায়তা করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
 
নূর মোহাম্মদের এই সাফল্য শুধু তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটায়নি, বহু বেকার যুবককে নতুন স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে দেশি-বিদেশি ফলের বাগান করে আগামী দিনের অর্থনীতিকে বদলে দেবে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তারা। 
 
 
সদর উপজেলার বারাহিচর এলাকার আফজাল হোসেন বলেন, আমি বাড়ি যাওয়া-আসার পথে বাগানটি প্রতিনিয়তই দেখি এবং মাঝে মাঝে ফল কিনি। বাজারের চেয়ে দাম একটু বেশি হলেও ঘ্রাণ এবং স্বাদও বেশি। যেহেতু চোখের সামনে বড় হয়, সেই কারণে খেয়ে অনেকটাই তৃপ্তি পাই।
 
ধামরাই থেকে আসা সুমন মাহমুদ বলেন, এই ড্রাগন বাগানে সতেজ ও বিষমুক্ত ফল পাওয়া যায়- এমন একটি পোস্ট দেখি আমার এক বন্ধুর ওয়ালে (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম)। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বাগানে চলে আসছি কিছু ফল নিতে। তবে বাজারে চেয়ে ফলের দাম অনেকটাই বেশি। বিষমুক্ত বলে কথা! কয়েকটা ফল বাগানেই খেলাম, অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু। 
 
কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী ব্লক সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম বলেন, ড্রাগন বাগানে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার প্রয়োগ করে ফল উৎপাদন করার কারণে বাজারের চেয়ে তার বাগানের ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু। ২০২০ সালে ড্রাগন বাগানের যাত্রা শুরু হয় এবং ২০২২ সাল থেকে বাজারজাত শুরু হয়। বাগানের শুরু থেকেই কৃষি বিভাগ পরামর্শসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে।
 
 
নূর মোহাম্মদ বলেন, ২০২০ সালের দিকে ১০৫ শতাংশ জমিতে ড্রাগন বাগান করি। প্রথমদিকে পরিবারের সদস্যসহ প্রতিবেশীরা উপহাস করে বলে, জঙ্গলের চাষ। শুরুর দিকে বাবা কোনো মূলধন দেননি। ব্যাংক ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধারদেনা করে শুরু করেছিলাম। প্রথম সিজনেই মূলধন উঠে আসায় সকলেই আমার বাগানের প্রশংসা করতে শুরু করে। আমার এই বাগানে প্রকৃতিক উপায়ে চাষাবাদ করায় উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি। চলতি মৌসুমে বৃষ্টির কারণে ফলন কিছুটা কম হলেও ২০ লাখ টাকার বেশি বিক্রি হবে। ড্রাগন বাগানে তেমন খরচ নাই, একবারই খরচ, তারপর ছিড়বো আর বিক্রি করবো। ৩ সন্তানের জন্য চারটি বাগান করেছি, যাতে ওদের চাকরির পেছনে দৌঁড়াতে না হয়।
 
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মাসুম ভূইয়া বলেন, উপজেলা পরিষদ থেকে ও কৃষি অফিসের সার্বিক ব্যবস্থায় উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছি। এরি মধ্যে ড্রাগন বাগানের জন্য খামার বাড়িতে রিকোজেশন দিয়েছি। আশা করছি, অতি দ্রুত অনুমোদন হয়ে আসবে। রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই বিষমুক্ত ফল উৎপাদন করায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নূর মোহাম্মদের ড্রাগন বাগান।
NJ
আরও পড়ুন