ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

তারল্য সংকটে একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংক, ভোগান্তি গ্রাহকের

আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২২ এএম

চরম তারল্য সংকটে পড়েছে একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ইসলামিক ব্যাংক। আইসিইউতে থাকা রোগীর চিকিৎসা খরচ, বিদেশে পড়তে যাওয়া সন্তানের বৃত্তি কিংবা মেয়ের বিয়ের টাকার মতো জরুরি আমানতও এখন তুলতে পারছেন না গ্রাহকেরা। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর একাধিক শাখা ঘুরে জানা গেছে, নতুন আমানত আসছে না, পুরোনো গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না, এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তাও আপাতত বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে পাঁচ ব্যাংক এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, একীভূত হতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘ইউনাইটেড ইসলামিক ব্যাংক’ বা ‘সম্মিলিত ইসলামিক ব্যাংক’। কিন্তু একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হলেও বাস্তব অগ্রগতি খুব ধীর, ফলে গ্রাহকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক বাড়ছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় অর্থ দিচ্ছে না। ফলে প্রতিদিনই কর্মকর্তাদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। একজন গ্রাহক জানান, 'আমার বাবা আইসিইউতে, কিন্তু তাঁর চিকিৎসার টাকা তুলতে পারছি না। সরকার দায়িত্ব নেবে বলেছে, কিন্তু কবে তা হবে কেউ জানে না।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমান সংকট ব্যাংকগুলোর দীর্ঘদিনের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণের ফল। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, 'সরকার এখন এই ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে নতুন কাঠামো গঠনের চেষ্টা করছে। মার্জারের পরেই বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন তহবিল সহায়তা দেবে। তবে গ্রাহকদের বর্তমান দুর্ভোগ সত্যিই দুঃখজনক।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যে পাঁচ ব্যাংককে ৪০ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে। 'তবুও অবস্থার উন্নতি হয়নি, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ব্যাংকগুলোকে একত্র করে রি-ক্যাপিটালাইজ করা হবে। প্রথমে এটি সরকারি ব্যাংক হিসেবে চালু হবে, পরে বেসরকারি খাতে দেওয়া হবে,' বলেন তিনি।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন তহবিল আসা পর্যন্ত আমানত ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, 'নতুন আমানত আসছে না, পুরোনো ঋণ আদায়ও হচ্ছে না। এই অবস্থায় গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, লাইসেন্স ইস্যু ও প্রশাসক নিয়োগের পর ১৫ দিনের মধ্যেই একীভূত ব্যাংক চালু করা সম্ভব হতে পারে। প্রাথমিকভাবে সহায়তা দেওয়া হবে আমানত বিমা তহবিল থেকে, যার পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।

তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, শুধু মার্জার নয়- সুশাসন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছ ঋণনীতি নিশ্চিত না হলে নতুন ব্যাংকও পুরোনো সমস্যার পুনরাবৃত্তি দেখতে পারে।

SN
আরও পড়ুন