কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের উত্তর ছাটগোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা গৃহহীন শহিদুল ইসলাম (৪৮)। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় তিনি তার দুই শিশু সন্তান, অসুস্থ বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীকে নিয়ে প্রায় ১১ মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে নিদারুণ কষ্টে রাত্রি যাপন করছেন। পরিবারটির একমাত্র চাওয়া, সরকার যদি তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ দেয়, তবেই তারা রাতের বেলা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে।
এক সময় শহিদুল অন্যের জমিতে একটি ছোট্ট ঝুপরি তুলে পরিবার নিয়ে থাকতেন এবং শিলখুড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চুক্তিভিত্তিক ঝাড়ুদারের কাজ করতেন। তার অসুস্থ বৃদ্ধ মায়ের চিকিৎসার জন্য সবকিছু ছেড়ে সপরিবারে ঢাকায় চলে গেলে, তার সেই কাজ চলে যায় এবং জমির মালিক জায়গাটি অন্য কাজে ব্যবহার শুরু করেন। কিছুদিন পর ঢাকা থেকে ফিরে এসে শহিদুল দেখেন তিনি এবং তার পরিবার পুরোপুরি গৃহহীন।
এরপর থেকে পরিবারটি বিভিন্ন দোকানের বারান্দা এবং উপজেলার নানা স্থানে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে শুরু করে। এভাবে কেটে যায় দীর্ঘ ১১ মাস।
সম্প্রতি গৃহহীন এই পরিবারটি উপজেলা পরিষদের পুরাতন ভবনের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) উপজেলা পরিষদের একজন কর্মী তাদের জিনিসপত্র থানায় জমা দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেন। এতে পরিবারটির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।
গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) মধ্যরাতে পরিবারটি যখন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পাশে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে।
শহিদুলের মা ছকিনা বেওয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাগো বাড়িঘর নাই। কয়েকদিন ধইরা উপজেলার বারান্দায় থাকতাছি। বৃহস্পতিবার একজন আইসা পোঁটলাপুটলি নিয়া থানায় দিয়া আমাগো তাড়ায়া দিছে। রাইতে ঠান্ডা পরে। ছোট দুইডা বাচ্চা নিয়ে এহোন আমরা কই যামু? কোনহানে থাকমু?’
অসহায় শহিদুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ‘নিজের জায়গা-জমি না থাকায় কিছুদিন কবরস্থানের মতো ভুতুড়ে জায়গায় ছিলাম। কাম পাইলে খাইবার পাই, কাম না জুটলে না খাইয়া থাকোন লাগে। শুনছি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেক ঘর না-কি খালি পইড়া থাকে, একটা ঘর দিলে বউ, পোলাপান আর অসুস্থ মাকে নিয়া রাইতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতাম।’
এ বিষয়ে শিলখুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘শহিদুলের মা অসুস্থ হয়ে পড়লে সে সবকিছু ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। সে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরে বসবাস করতে চাইলে তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপ জন মিত্র এ বিষয়ে জানান, ‘শহিদুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য আবেদন করলে তাকে ঘর দেয়া হবে।
ঢাকার নতুন ডিসি শফিউল আলম