ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

হাসিনার রায় কার্যকর হওয়া দেখতে চান ভুক্তভোগী পরিবাররা

আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৭ পিএম

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ দায়ে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে এনে রায় কার্যকর হওয়া দেখতে চান আন্দোলনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার আগে সেখানে উপস্থিত জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নিহতদের পরিবার ও ভুক্তভোগীরা এই কথা জারনান।

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে অপরাধ করেছে তার জন্য তাকে ‘হাজারবার মৃত্যুদণ্ড’ দেওয়া হলেও সেটি কম হয়ে যায়।’

ভাইকে হারানো স্নিগ্ধের মত আরও কয়েকটি স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যরা এদিন রায় শুনতে ট্রাইব্যুনালে আসেন। এর আগে আদালত চত্বরে তারা সংবাদমাধ্যমের কাছে রায় নিয়ে নিজেদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।

স্নিগ্ধ বলেন, ‘শেখ হাসিনার সকল অন্যায় অত্যাচারের যে বিচার, সেই বিচারের রায় বাংলাদেশের জনগণ ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছে। সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের থেকে আজকে রায়ের অপেক্ষা; তো বাংলাদেশের জনগণ যে রায় দিয়েছে, সেই রায় আজকে আদালতের মুখ থেকে আমরা আশা করি।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা যেই অন্যায় করেছে, তার জন্য তাকে একবার না হাজারবারও যদি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, সেটি শেখ হাসিনার যেই অন্যায়-অত্যাচার আছে, তার জন্য কম হয়ে যায়।’

রায়ের পর তাকে দেশে এনে ‘দ্রুত’ তা কার্যকরও দেখতে চান বলে তার প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন তিনি।

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা আদালতের দৃষ্টিতে পলাতক। সে কারণে এ মামলার শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তিনি পাননি।

তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জুলাই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলা।

এদিন রায় শোনার জন্য ট্রাইব্যুনালে হাজির হোন আরও অনেক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

অভ্যুত্থানে নিহত সৈয়দ মুনতাসির রহমানের বাবা সৈয়দ গাজীউর রহমান বলেন, ‘অপরাধ সে (হাসিনা) করেছে, যেভাবে প্রকাশ্যে খুন করেছে, প্রকাশ্যে তার ফাঁসি হওয়া উচিত আমি মনে করি।’

তিনি নিজ চোখে ‘পুলিশ গুলি করছে’ দেখছেন দাবি করে বলেন, ‘এখন যদি বলেন তার (ওই পুলিশ) নাম বলেন, আমি বলতে পারবো না। এভাবে তো বিচার হবে না। গণহত্যায় বিচার যেভাবে হয়, সেভাবে হওয়া উচিত। কারণ আমার ছেলে তো এই পৃথিবী থেকে কিছু নিতে পারেনি, সব সবাইকে দিয়ে গেছে। কিন্তু আজকে আমরা কী পাচ্ছি? আজকে দেড় বছর এই বিচারের নামে কী হচ্ছে? আমরা আশা করি আজকের এই বিচারে সঠিক রায়টা হবে এবং দ্রুত এই রায়টা কার্যকর হবে।’

গণ আন্দোলনের সেই উত্তাল সময়ে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট তার একমাত্র সন্তান দাখিলের শিক্ষার্থী সৈয়দ মুনতাসির ‘দুইবার গুলি খেয়ে’ মারা গেছেন বলে তুলে ধরেন তিনি।

ওইদিনই অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্যায়ে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন থেকেই ভারতই অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

তিনি ভারতে থাকলে রায় কীভাবে কার্যকর হবে জানতে চাইলে আরেক ভুক্তভোগী হাফিজুল শিকদারের বাবা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘রায় হওয়ার পর ওনাকে (হাসিনা) ভারত থেকে যেন নিয়ে আসা হয়। নিয়ে আইসা যেন বাংলার মাটিতে যেন ওকে ফাঁসি দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘এই ফাঁসি আমরা শহীদ পরিবার দেখলে আমরা খুশি হব, কারণ আমাদের ছেলে, এই যে ছেলে এই ছেলে হারানোর ব্যথা আমি ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।’ তার সন্তান ২০২৪ সালের ২০ জুলাই ‘গুলিবিদ্ধ হন’ বলে দাবি করেন তিনি।

এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন আন্দোলনের সময় ও পরে বিভিন্ন বিষয়ে সক্রিয় থাকা ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি।

তিনি বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা হল যে আজকে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে। আদালতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। জাস্টিস প্রতিষ্ঠিত হবে। আর আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করি যদি আজকে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তির বাহিরে যাওয়ার আর তো কোনো সুযোগ নাই। কারণ যে গণহত্যাটা হয়েছে, এটা আমাদের চোখের সামনে মাত্র এক বছর আগে হয়েছে।’

মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে সকাল ৯টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় ট্রাইবুনালে এনে হাজত খানায় রাখা হয়। তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এ মামলার আরেক আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক।

DR/FJ
আরও পড়ুন