ঢাকা
বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

এক ছাদের নিচে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও চার্চ

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৮ এএম

বিশ্বজুড়ে যখন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং জাতিগত বিদ্বেষ বৈশ্বিক শান্তির পথে প্রধান অন্তরায়, তখন শতবর্ষের সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মালয়েশিয়া। রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে কুয়ালা সেলাঙ্গর রাজ্যের আজোক বুকিত রতান নামক স্থানে মাত্র ২০০ মিটার পরিসরের মধ্যে গড়ে উঠেছে এক অভূতপূর্ব ধর্মীয় মিলনকেন্দ্র। এখানে পাশাপাশি অবস্থান করছে – মুসলিমদের পবিত্র মসজিদ, হিন্দুদের প্রাচীন মন্দির, খ্রিস্টানদের গির্জা এবং চাইনিজ ধর্মাবলম্বীদের চার্চ (টেম্পল)।

এই বিরল সহাবস্থান বৈশ্বিক ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মালয়েশিয়ার চিরন্তন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাণী প্রচার করছে। ঐতিহাসিক এই স্থাপনাগুলো দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা ভিড় করেন। কুয়ালালামপুর থেকে ৫-লেনের সুপ্রশস্ত মহাসড়ক ধরে মনোরম পাম বাগান দেখতে দেখতে এখানে পৌঁছানো যায়।

শতবর্ষের সহাবস্থান ও দৈনন্দিন চিত্র

 

সন্ধ্যার সাঝ বাতি জ্বলার সঙ্গে সঙ্গেই এই স্থানে এক মন মুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। একদিকে বেজে ওঠে মন্দিরের ঢোল এবং উলুধ্বনি, তার ঠিক পাশেই ভেসে আসে মুয়াজ্জিনের সুমধুর আযানের ধ্বনি, আর তারই সাথে শোনা যায় গির্জার টুং টাং ঘণ্টা। মাত্র একটি রাস্তা ব্যবহার করেই চারটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে সহজেই যাতায়াত করা যায়।

এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা ও 'ওয়ান মালয়েশিয়া বুকিত রতানের' কর্মকর্তা, ৮০ বছর বয়সী মোহাম্মদ রসলি জানান, সামনের বছর এখানকার মসজিদটি ১০০ বছরে পদার্পণ করবে। তবে এই স্থাপনাগুলোর মধ্যে সবথেকে পুরনো হলো কোয়েল মন্দির, যার বয়স ১২০ বছর। বিশেষ ধরনের পাথর খোদাই করে তৈরি এই মন্দিরের নির্মাণশৈলী এবং কারুকার্য অত্যন্ত নিখুঁত। গীর্জা এবং চাইনিজ টেম্পলটির বয়সও প্রায় ৫০ বছর।

বর্তমানে মন্দির ও মসজিদ সব সময় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। গির্জা ও চার্চ তাদের নির্ধারিত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সময় খোলা হয়। স্থাপনা পরিদর্শনে কোনো পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই, তবে মন্দিরের অভ্যন্তরে ছবি তোলা নিষেধ।

সংঘাত নয়, ভালোবাসাই মূলমন্ত্র

মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা জোর দিয়ে বলেন, মাত্র ২০০ মিটার জায়গার মধ্যে চারটি প্রধান ধর্মীয় স্থাপনার এমন নজির বিশ্বের আর কোথাও নেই। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিগত ১০০ বছরের মধ্যে এই এলাকায় কোনো প্রকার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা অসহিষ্ণুতার নজির নেই।

স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষরা একে অপরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং নিমন্ত্রণ করেন। এভাবেই শত বছর ধরে তাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ আছে। পরস্পরের প্রতি আন্তরিক সুসম্পর্কের এই ধারা অব্যাহত রেখে মালয়েশিয়া ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত বহিঃবিশ্বের জাতিগোষ্ঠীর জন্য এক অনুকরণীয় বার্তা বহন করে।

HN
আরও পড়ুন