ঢাকা
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সাকিবকে পেছনে ফেলে শীর্ষ উইকেট শিকারি তাইজুল

আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম

মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আজ যেন জন্ম নিল বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের এক নতুন অধ্যায়। বছরের পর বছর নিঃশব্দে পরিশ্রম করে যাওয়া সেই বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম আজ আনুষ্ঠানিকভাবে উঠলেন দেশের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেটশিকারির আসনে। 

শুক্রবার প্রথম ইনিংসেই সাকিব আল হাসানের ২৪৬ উইকেটের রেকর্ড স্পর্শ করেছিলেন তিনি। আর শনিবার দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নিকে এলবিডব্লিউ করে এককভাবে শীর্ষে উঠে গেলেন তাইজুল, সংখ্যাটি হয়ে দাঁড়াল ২৪৭। পরে পল স্টার্লিংকে ফিরিয়ে এনে তা বাড়িয়ে নিলেন ২৪৮-এ।

তাইজুলের সেই মুহূর্তটি ছিল স্মরণীয়। বলস্টাম্পে রাখার মতো নিখুঁত কুইকার ডেলিভারিটি বুঝে উঠতে পারেননি বালবার্নি। শক্ত আপিলে আম্পায়ার সঙ্গে সঙ্গেই আঙুল তুলতেই মাঠজুড়ে শুরু হয় উল্লাস। রিভিউ নিয়ে বাঁচার কোনো সুযোগও পাননি আইরিশ অধিনায়ক। এরপর সতীর্থরা ছুটে এসে তাইজুলকে ঘিরে ধরেন, উঠে আসে হাসি-আবেগের মিশেল। মুশফিকুর রহিম তাকে কোলে তুলে যখন উঁচিয়ে ধরছেন, তখন দৃশ্যটি যেন বলছিল, বাংলাদেশের টেস্ট বোলিংয়ের নতুন রাজদণ্ড এখন তাইজুলের হাতে।

বাংলাদেশের দেওয়া ৫০৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আয়ারল্যান্ড শুরুতেই সেই আঘাত হজম করে। ষষ্ঠ ওভারেই তাইজুলের হাতে রচিত ইতিহাস তাদের বিপদের দরজা খুলে দেয়। অথচ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং চিত্র ছিল স্থির ও আত্মবিশ্বাসী। ৪ উইকেটে ২৯৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে লিড দাঁড় করানো হয় ৫০৮ রানে। আগের দিন থেকে শুরু হওয়া এই ইনিংসে মূল ভরসা ছিল মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। 

লাঞ্চের ঠিক পর ৮৭ রান করে আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মুমিনুলকে, আর মুশফিক সংগ্রহ করেন অপরাজিত ৫৩ রান। তবে ইনিংস ঘোষণার মুহূর্তেই বোঝা যাচ্ছিল, বাংলাদেশ চেয়েছে তাদের বোলারদের সামনে বাকি পাঁচ সেশনে যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করে দিতে।

আর সেই সুযোগের সবচেয়ে বড় চরিত্র যে হবেন তাইজুল-তা দিনের শুরু থেকেই স্পষ্ট ছিল। গত এক দশকে তিনি নিজেকে পরিণত করেছেন বাংলাদেশের টেস্ট দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বোলারে। সাকিব যেখানে ১২১ ইনিংসে ২৪৬ উইকেট নিয়েছিলেন, সেখানে তাইজুল মাত্র ১০২ ইনিংসেই ছাড়িয়ে গেলেন তাকে। পরিসংখ্যানই বলে দেয়, কতটা ধারাবাহিকতা সঙ্গে নিয়ে তিনি এগিয়েছেন।

তাইজুলের নিচে এখন বাংলাদেশের উইকেট তালিকায় আছেন সাকিব আল হাসান, এরপরই মেহেদী হাসান মিরাজের ২০৯ উইকেট। আরও আছেন কিংবদন্তি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক (১০০) এবং মাশরাফি বিন মুর্তজা (৭৮)। তবে এই নামগুলোর ওপরে আজ যে স্থানটি তৈরি হলো, সেটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি দীর্ঘ সময় ধরে নিজের কাজটি নিখুঁতভাবে করে যাওয়া, দলকে সেবা দেওয়া এবং সর্বোপরি নিজের যোগ্যতাকে নিঃশব্দে প্রমাণ করে আসা এক ক্রিকেটারের গল্প।

২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হওয়া তাইজুল আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন এক মর্যাদায় বসেছেন, যেখান থেকে সামনে তার লক্ষ্য হতে পারে আরও অন্তত এক দশক স্পিন আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়া। 

আরও পড়ুন