ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

চাকরির লোভে ভারতে গিয়ে কিডনি হারালেন ৩ বাংলাদেশি

আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ এএম

চাকরির লোভে ভারতে গিয়েছিলেন ৩ বাংলাদেশি যুবক। ভারতে পৌঁছানোর পর তারা ৩ জনই কিডনি পাচারকারী সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে প্রত্যেকেই তাদের একটি করে কিডনি হারিয়েছেন। 

ভারতের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দাখিল করা সাম্প্রতিক অভিযোগপত্রে ওই তিন বাংলাদেশি তাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন এবং কিডনি পাচার চক্রের কথা ফাঁস করেন। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভুক্তভোগী ওই তিন ব্যক্তির পরিচয় গোপন রেখে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভুক্তভোগীদের মধ্যে প্রথম জনের নামের দুটি অক্ষর টিআই এবং বয়স ৩০ বছর। পরিবারে তার মা, বোন ও স্ত্রী আছেন। বাংলাদেশে তিনি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। কিন্তু দোকানে আগুন লেগে তার পুরো ব্যবসা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এক এনজিও থেকে তিনি ৮ লাখ টাকা ধার নিয়ে ফের নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ৩ লাখ টাকার বেশি ঋণ শোধ করতে পারেননি। একপর্যায়ে আর্থিক চাপের মুখে বন্ধুর পরামর্শে তিনি ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ওই বন্ধুই তাকে পাসপোর্ট, মেডিকেল ভিসা, এমনকি ভারতে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তবে গত ১ জুন ভারতে যাওয়ার পর ওই ব্যক্তি জানতে পারেন, সেখানে তার জন্য চাকরি-বাকরি কিছুই নেই। এর বদলে তাকে কিডনি বিক্রি করতে হবে। পাসপোর্ট-ভিসা কেড়ে নিয়ে ওই চক্রের সদস্যরা বলেছিলেন, কিডনি না বিক্রি করলে তিনি আর কোনো দিন ভারত থেকে ফিরতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে কিডনি বিক্রি করেন ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগী দ্বিতীয় জনের নামের দুটি অক্ষর এসএস এবং বয়স ৩৫ বছর। তাসকিন নামে এক ব্যক্তি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে পাঠিয়েছিলেন দিল্লিতে। গত ২ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে পৌঁছানোর পর রাসেল ও মোহাম্মদ রোকন নামে দুজন লোক তাকে যশোলায় নিয়ে গিয়ে বলেন, সেখানকার এক হাসপাতালে চাকরি পাবেন তিনি। এ জন্য তার বেশ কিছু মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার। প্রায় ১৫-২০টি পরীক্ষা করা হয় তার।

তারপর এপ্রিলের ২ তারিখে তাকে আবারও হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং এক নার্স তাকে একটি ইনজেকশন দিতেই তিনি জ্ঞান হারান। ৩ এপ্রিল জ্ঞান ফিরল আবারও ইনজেকশন দিয়ে তাকে অজ্ঞান করা হয়। এরপর এপ্রিলের ৫ তারিখ তার জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখেন তার পেটে একটি সেলাইয়ের দাগ। তাকে জানানো হয় তার একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। ৬ এপ্রিল রাসেল তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিশদ তথ্য জেনে সেখানে ৪ লাখ টাকা জমা করে। তবে তার পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে তার ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। এরপর তাকে জানানো হয়, তিনি চাকরি পাবেন না, তাকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে।

ভুক্তভোগী বাংলাদেশি তৃতীয় ব্যক্তির নাম এস অক্ষরে শুরু। তার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করে অরণ্য নামে এক ব্যক্তি ভারতে চাকরি দেবে বলেছিল। এমনকি প্রশিক্ষণের সময় বৃত্তিও দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। ভারতে পৌঁছানোর পর ওই বাংলাদেশির বেশ কিছু মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। এরপর একইভাবে তার কিডনিও অস্ত্রোপচার করে বের করে নেওয়া হয়।

মাত্র ৬ দিনে তার শরীর থেকে ৪৯ টিউব রক্ত টানা হয়েছিল বলে জানান ওই ব্যক্তি। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন, ‘আমাকে এমন কিছু দেওয়া হয়েছিল যার ফলে প্রথমে আমি দুর্বল বোধ করি এবং একপর্যায়ে জ্ঞান হারাই। আমি ঘুম থেকে ওঠে দেখি আমার কিডনি নেই। আমাকে বলা হলো আমি একটি কিডনি নিয়েই ভালোভাবে বাঁচতে পারব। পরে আমাকে সাড়ে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়।’

এই তিন বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার অধীনে একটি মামলা করেছে ভারতের পুলিশ। চার্জশিট দাখিল করে তারা শুনানির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভুক্তভোগীরা এরই মধ্যে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন।

MB/FI
আরও পড়ুন