দেশের সাদা সোনা খ্যাত বাগেরহাটে বাগদা চিংড়ি ঘেরে ভয়াবহ মড়ক দেখা দিয়েছে। ভাইরাস, পানি স্বল্পতা, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও লাগাতার বৃষ্টির কারণে ভরা মৌসুমেই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
চাষিদের অভিযোগ, মানসম্মত পোনা সংকটের পাশাপাশি প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঘেরে চিংড়ি মারা যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে।
রামপালের চাকশ্রী বাজার এলাকার চাষি মো. শাহজাহান বলেন, ‘গত বছর এ সময় ঘের থেকে প্রতিদিন ৪০-৫০ কেজি চিংড়ি ধরতাম। এখন জাল ফেললে প্রায় খালি উঠে আসে। লাখ টাকার পোনা দিয়েছি, ঘেরে এখন শূন্য অবস্থা।’
রামপালের চাষি সেলিম হোসেন বলেন, ‘আমাদের ঘেরে এখন যা অবস্থা, তাতে ঋণ শোধ করাই মুশকিল হবে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী মৌসুমে চাষ করা কঠিন হয়ে যাবে।’
জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির তৌহিদুর রহমান সুমন বলেন, ‘বাগদা চিংড়ি মারা যাওয়ার সঠিক কারণ উদঘাটনে আমরা চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগিতা চেয়েছি। বিজ্ঞানভিত্তিক রোগ নির্ণয় ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।’
বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঘেরের পানি ও মাটি সংগ্রহ করে পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হবে। দ্রুত ফলাফল জানানো হবে, যাতে চাষিরা সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারেন।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ভাইরাসের পাশাপাশি পানি স্বল্পতা, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও লাগাতার বৃষ্টির কারণে লোনা পানির চিংড়ি মারা যাচ্ছে। চাষিদের পরিকল্পিতভাবে পোনা নির্বাচন, ঘের প্রস্তুতি ও পানি ব্যবস্থাপনা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলায় ৫১ হাজার ১৫৯ হেক্টর জমিতে ৪৬ হাজার ৩১৩টি বাগদা চিংড়ি ঘের রয়েছে। গত অর্থ বছরে এ জেলায় উৎপাদিত বাগদা চিংড়ির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৯৪০ মেট্রিকটন। তবে এবার উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অনেক কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।