আলেম উলামার ঘাঁটি খ্যাত সুরমা ও কুশিয়ারার তীরঘেঁষা জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসন। তবে খোদ আলেম উলামারাই বিভক্ত স্ব স্ব দল আর প্রতীক নিয়ে। বারবারই আসনটি হাতছাড়া হয় বিএনপির। ভাগাভাগিতে জোটবদ্ধ প্রার্থীদের হাতে চলে যায় আসন।
স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগ ৪ বার, জাতীয় পার্টি ৩ বার, স্বতন্ত্র ২ বার ও ১ বার করে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী জয়লাভ করেন। বিএনপির কপাল পুড়ে যায় জোট হলেই। বিএনপির পক্ষ থেকে আসনটি ভাগের হিস্যা হিসেবে দেওয়া হয় শরীকদের। বিএনপির সাথে জোট করে একবার বিজয়ী হন জামায়াতের প্রার্থী। কিন্তু কখনও জোটপ্রার্থী হওয়ার ভাগ্য হয়নি কোন বিএনপি নেতার।
তবে এবার নির্বাচনি জোট হলেও শরীক নয়, দলীয় প্রার্থী চান বিএনপি নেতাকর্মীরা। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ৯ জন এবং জামায়াতসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের একক প্রার্থীরা এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিলেট-৫ আসন থেকে ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবুল হারিছ চৌধুরী। এরপর আসনটিতে বিএনপির জনপ্রিয় কোন নেতা প্রার্থী হওয়ার সুযোগই পাননি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন আব্দুল কাহির চৌধুরী।
একই বছর ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ত্যাগী ও জনপ্রিয় কোন নেতা মনোনয়ন পাননি। জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করে ধানের শীষ প্রতীক নেন এমএ মতিন চৌধুরী। এরপর ৮ম ও ৯ম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে আসনটি বাগিয়ে নেয় জোটসঙ্গী জামায়াত। ২০০১ সালে বিএনপির সাথে জোট করে সংসদে যান জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।
২০০৮ সালে আবারও জোটের প্রার্থী হলেও বিজয় ধরে রাখতে পারেননি তিনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফের আসনটি জোটসঙ্গী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। প্রার্থী হন মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। তাকে পরাজিত করে ৩য় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার।
বারবার জোটের শরীকদের আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা। এবার নির্বাচনি জোট হলেও আসন ছাড়তে রাজি নন দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ও নেতাকর্মীরা। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থীকেই বিজয়ী করতে চান তারা। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকেই এমন দাবি উঠছে জোরালোভাবে।
সিলেট-৫ আসনে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন বিএনপির ৯ নেতা। এর মধ্যে নির্বাচনি এলাকা জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উভয় উপজেলা সমানতালে চষে বেড়াচ্ছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু। ২০২৪ সালের নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে তিনি রাজপথে ছিলেন সক্রিয়। আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি ঢাকায় পুলিশ হত্যা মামলারও আসামি হন।
আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঝুঁকি নিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি নির্বাচনি এলাকার নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জন করেন। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে তিনি রাষ্ট্র সংস্কারে তারেক রহমানের ৩১ দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে নির্বাচনি এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশিদও (চাকসু মামুন) পিছিয়ে নেই। দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সড়ক সংস্কার, নদী ভাঙনরোধ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হয়ে তিনি নির্বাচনি এলাকার মানুষের মন জয়ের চেষ্টা করছেন।
এছাড়াও আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আশিক উদ্দিন চৌধুরী, সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ইকবাল আহমদ তাপাদার, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহসভাপতি শরীফ আহমদ লস্কর, আবুল হারিছ চৌধুরী কন্যা ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় মহিলা দলের প্রচার সম্পাদক লুৎফা খানম চৌধুরী স্বপ্না।
আসনটিতে জামায়াতে ইসলাম দলটি জেলার নায়েবে আমির হাফিজ আনোয়ার হোসেন খানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর ছেড়ে দেওয়া আসনটি পুনরুদ্ধারে তিনি নির্বাচনি এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে বিএনপির সাথে জোট হলে আসনটিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের জয় নিশ্চিত। এখন পর্যন্ত মাঠ জরিপে তার জনপ্রিয়তা শীর্ষে বলে জানা গেছে।
এ আসনের লড়াইয়ে আরও রয়েছেন- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, খেলাফত মজলিস সিলেট জেলা শাখার উপদেষ্টা মুফতি আবুল হাসান, ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী ও ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল করীম আবরার।
এছাড়াও নির্বাচনি তৎপরতা শুরু না করলেও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা সাব্বির আহমদ, সাইফুদ্দিন খালেদ, এমএ মতিন ও এম. জাকির হোসেন।