আমরা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখ রক্ষায় সানগ্লাস ব্যবহার করি, কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোন ও কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে চোখও মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিন চোখ ও স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক প্রভাব ফেলে।
ডিজিটাল ডিভাইস যেমন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হলেও, এর অতিরিক্ত ব্যবহার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকানো হাত, কব্জি, চোখ, মেরুদণ্ডসহ সারা শরীরের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ঝুঁকি মূলত চারটি ক্ষেত্রে ভাগ করা যায়
- ভৌত ক্ষতিকারক: ধুলাবালি, ময়লা, অত্যধিক তাপ ও আর্দ্রতা, নয়েজ- যা যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা কমায়।
- বৈদ্যুতিক ঝুঁকি: স্পাইক, সার্জ, ব্রাউনআউট, ব্ল্যাকআউট, ট্রানসিয়েন্ট, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন (EMR), ইএমআই
ও ইএসডি যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। - সফটওয়্যার ঝুঁকি: অপারেটিং সিস্টেমের ত্রুটি, ভাইরাস আক্রমণ, হ্যাকিং ও তথ্য চুরি।
- ব্যবহারকারীর ভুল পরিচালনা: যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ বা ব্যবহার না করা।
চোখের জন্য ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহারও বিপজ্জনক। দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকালে চোখে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- আই স্ট্রেইন ও কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম: চোখ ক্লান্ত হওয়া, জ্বালাপোড়া, শুষ্কতা ও মাথাব্যথা।
- ড্রাই আই ডিজিজ: চোখের পলক কম পড়ার কারণে আর্দ্রতা হারানো।
- মায়োপিয়া বৃদ্ধি: দূরের জিনিস অস্পষ্ট দেখা ও পূর্ববর্তী মায়োপিয়ার অবনতি।
- নীল আলোর ক্ষতি: কর্নিয়া ও ম্যাকুলার ডিসজেনারেশনের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
গবেষকরা সতর্ক করেছেন, শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়ার হার বাড়ছে। বিশেষ করে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ফোন বা ট্যাব ব্যবহার সীমিত রাখা জরুরি।
চোখ সুরক্ষার পরামর্শ
- ২০-২০-২০ নীতি মেনে চলুন: প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ড বিরতি নিয়ে ২০ ফুট দূরের কিছু দেখুন।
- স্ক্রিন ব্রাইটনেস কমিয়ে আই প্রোটেকশন বা নাইট মোড ব্যবহার করুন।
- নীল আলো ব্লক করতে লেন্স কোটিং বা বিশেষ চশমা ব্যবহার করুন।
- চোখের স্বাভাবিক পলক ফেলার হার বজায় রাখুন।
- শিশুদের ১২ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত স্মার্টফোন ব্যবহার সীমিত করুন।
- প্রগ্রেসিভ লেন্স বা নতুন মডেলের মনিটর ব্যবহার করুন যা ‘মিড ডিসট্যান্স ভিউ’ এর জন্য উপযুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতন ব্যবহার ও নিয়মিত বিরতি নিলে ডিজিটাল ডিভাইসের ক্ষতিকর প্রভাব অনেকাংশে কমানো সম্ভব।