বাংলাদেশে শিশুদের পুষ্টিহীনতা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। দেশের একটি বড় অংশের শিশু প্রয়োজনীয় সুষম পুষ্টি না পাওয়ায় শারীরিক ও মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে, যা জাতীয় উন্নয়নকেও প্রভাবিত করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করা শিশুদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং দেশের টেকসই অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৩৬ শতাংশ শিশু এখনো অপুষ্টির শিকার। এর মধ্যে ভিটামিন ‘এ’, আয়রন ও জিঙ্কের ঘাটতি অন্যতম বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অপুষ্টির কারণে শিশুদের মধ্যে উচ্চতা ও ওজন গড় মানের নিচে থাকে, সহজে রোগে আক্রান্ত হয় এবং মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়।
সুষম পুষ্টি কী এবং কেন জরুরি
সুষম পুষ্টি হলো এমন একটি খাদ্যব্যবস্থা, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেল ও পানি সঠিক পরিমাণে সরবরাহ করে। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শৈশবকালেই মস্তিষ্কের বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং দৈহিক বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে।
পুষ্টিহীনতার পেছনে প্রধান কারণ
- দারিদ্র্য: নিম্ন আয়ের কারণে পরিবারগুলো শিশুদের পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দিতে পারে না।
- অজ্ঞতা: পুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক অভিভাবকই জানেন না।
- খাদ্য বৈচিত্র্যের অভাব: শিশুদের খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে না।
- পরিবেশগত সমস্যা: নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে পুষ্টি শোষণ ব্যাহত হয়।
- করণীয়: শিশুদের জন্য সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করতে যেসব উদ্যোগ প্রয়োজন
বিশেষজ্ঞ এবং পুষ্টিবিদরা বলছেন, সরকার ও সমাজের যৌথ প্রচেষ্টায় নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা কমিয়ে আনা সম্ভব
- পুষ্টি শিক্ষার প্রসার: অভিভাবকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানো।
- স্কুলে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মধ্যাহ্নভোজ চালু করে পুষ্টির ঘাটতি কমানো।
- জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচি: গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ।
- দারিদ্র্য বিমোচন: দরিদ্র পরিবারে খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক সহায়তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ।
- নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত: স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে তুলতে জরুরি পদক্ষেপ।
Child24
সরকার ও সমাজের সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুষম পুষ্টির মাধ্যমে একটি মেধাবী ও কর্মক্ষম প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব, যারা ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দেবে। এজন্য সরকারি নীতিমালা, পারিবারিক সচেতনতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী পুষ্টিনীতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
সুষম পুষ্টি নিশ্চিতকরণ শুধুমাত্র শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্য নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্যও অপরিহার্য। তাই পুষ্টিহীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখনই সময় সরকার, পরিবার ও সমাজকে একসাথে কাজ করার।