শীতকাল এলে শিশুদের যত্ন নেওয়া হয়ে পড়ে আরও জরুরি। ঠাণ্ডা, ধুলা ও ভাইরাসের বাড়াবাড়ির কারণে এসময় নবজাতক ও ছোট শিশুদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে সর্দি, কাশি, ফ্লু ও ত্বক শুষ্কতার মতো সমস্যা প্রায়ই দেখা দেয়। চিকিৎসকরা বলছেন, সামান্য কিছু ঘরোয়া যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করলে শিশুকে অনেকটাই সুস্থ রাখা সম্ভব।
সঠিক পোশাক বেছে নিন
শীতে শিশুকে বাইরে নিতে হলে অবশ্যই টুপি, মোজা ও মিটেনস পরাতে হবে। রাতে ঘুমানোর সময়ও হালকা উষ্ণ পোশাক পরিয়ে রাখুন। তবে অতিরিক্ত কাপড় পরিয়ে দেওয়া ঠিক নয় এতে শিশুর শরীরে ঘাম জমে ঠাণ্ডা লাগতে পারে। ঘরের তাপমাত্রা অনুযায়ী পোশাক পরানো উচিত, যেন শিশু সহজে হাত-পা নাড়াতে পারে। একই সঙ্গে মায়ের পোশাকও নরম ও আরামদায়ক হওয়া দরকার, যাতে শিশুর ত্বকে কোনো জ্বালাভাব না হয়।
হালকা তেলে ম্যাসাজ দিন
শীতের সময় শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই গরম হালকা তেলে ম্যাসাজ করলে উপকার পাওয়া যায়। সরিষার তেল, অলিভ অয়েল বা বাদাম তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। গোসলের আগে বা রাতে ঘুমানোর আগে তেল মালিশ করলে শিশুর শরীর উষ্ণ থাকবে, রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং ঘুমও গভীর হবে।
ঘরের তাপমাত্রা ও বাতাস ঠিক রাখুন
শিশুর ঘরে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। ঘর যেন অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম না হয়। প্রয়োজনে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে বাতাসে আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং শিশুর শ্বাস নিতে সমস্যা না হয়।
মায়ের সুষম খাদ্য ও শিশুর পুষ্টি
শীতকালে মায়ের খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত সুপ, সালাদ, সবুজ শাকসবজি, বাজরা, ভুট্টার আটা, ডাল ও ফলমূল। এগুলো মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দুধের গুণমান উন্নত করে। শিশুকে নিয়মিত স্তন্যদুগ্ধ পান করানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মায়ের দুধই শিশুর পুষ্টি ও সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রধান উৎস।
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
শিশুর যত্নে পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। শিশুকে ধরার আগে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও মাস্ক পরে শিশুর কাছে যেতে উৎসাহিত করুন। শিশুর পোশাক, বিছানা ও আশপাশের স্থান প্রতিদিন পরিষ্কার রাখা জরুরি। সংক্রমণ এড়াতে পরিবারের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
মায়ের সংস্পর্শই শিশুর সেরা সুরক্ষা
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মায়ের স্পর্শই শিশুর সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। মায়ের শরীরের উষ্ণতা শিশুর শরীরে প্রাকৃতিক তাপ যোগায়, যা তাকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করে। কোলে নেওয়া বা স্তন্যপান করানোর সময় সেই উষ্ণতা শিশুর শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, যা তার মানসিক প্রশান্তি ও শারীরিক সুস্থতায় সহায়তা করে।