ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার পর অনেকেই মাথা ঘোরা, শরীর দুলে ওঠা বা চারপাশ অস্বাভাবিক লাগার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই অবস্থাকে বলা হয় ইকেলেনজিয়া বা আর্থকোয়েক সিকনেস। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্প শরীর ও মস্তিষ্ককে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে ঝাঁকুনি থেমে যাওয়ার পরও শরীর সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত অবস্থায় থাকে।
ভূমিকম্পের পর মাথা ঘোরে কেন
ভূমিকম্পের পর মাথা ঘোরা একটি স্বাভাবিক সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের একে ইকেলেনজিয়া বা আর্থকোয়েক সিকনেস বলা হয়। ভূমিকম্পের সময় আমাদের চোখ, কান ও শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণকারী অঙ্গগুলো একসঙ্গে অ্যালার্ট মোডে বা অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থায় চলে যায়। আর তাই কম্পন থেমে গেলেও মস্তিষ্ক কিছুক্ষণ সেই কম্পনকে স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখে। ফলে মাথা ঘোরায়, শরীর দুর্বল লাগে। এর কিছু কারণ হলো
দেহের ভারসাম্য-ব্যবস্থার বিভ্রান্তি
২০২২ সালে ইউনিভার্সিটি অব টোকিও একটি গবেষণা করে। এতে দেখা যায়, শক্তিশালী ভূমিকম্পের সময় আমাদের ভেস্টিবুলার সিস্টেম (যা শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখে) হঠাৎ অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে যায়। এই কারণে ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার পরও এই সিস্টেম কিছুটা সময় নিউরনে দুলুনির সংকেত পাঠাতে থাকে। ফলে মাথা ঘোরে।
স্ট্রেস হরমোনের বৃদ্ধি
স্ট্যানফোর্ড সাইকোলজি ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, বিপদ বা আতঙ্কের মুহূর্তে করটিসল দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে মাথা ঝিম ঝিম লাগা, মাথা ঘোরা, বমিভাব দেখা দিতে পারে।
ভূমিকম্প-পরবর্তী ফ্যান্টম মোশন
২০২৩ সালে নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার এ প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, মানুষ যখন দীর্ঘ সময় কম্পনের ভেতর থাকে, মস্তিষ্ক কয়েক মিনিট ধরে সেই নড়াচড়াকেই বাস্তব বলে ধরে নেয়। ফলে কম্পন থেমে যাওয়ার পরও শরীর হালকা দুলতে থাকার অনুভূতি হয়।
হাইপার-অওয়ারনেস ও ভয়
ভূমিকম্পের পর বাস্তবে আর কম্পন না থাকলেও, উদ্বেগ থাকে মনে। আর এই উদ্বেগের কারণেই মাথা হালকা লাগা, হাঁটাহাঁটিতে অসুবিধা, মাথায় চাপ এসব হতে পারে।
ভূমিকম্পের পর মাথা ঘোরা শরীরের এক স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। সাধারণত ১০-৩০ মিনিটের মধ্যে মাথা ঘোরানো কমে যায়। পানি খেলে বা বিশ্রাম নিলে শরীর ঠিক হয়ে যায়। তবে দীর্ঘসময় এই সমস্যা চলতে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।