মানুষ ঘুমের মধ্যে কেন হাসে, করণীয় কী

প্রায় সব বয়সের মানুষ ঘুমের মধ্যে হাসে। তবে এই হাসি আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের ইঙ্গিত দেয় যেটা অনেকের কাছেই অজানা। আপনি কি কখনো দেখেছেন, কেউ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হেসে উঠছে? অথবা হয়তো আপনার সঙ্গী মাঝরাতে হঠাৎ হেসে উঠেছে? বিষয়টি যতটা মজার শোনায়, এর পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা রয়েছে। হেলথ শটের এক প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এ বিষয়ে বিস্তারিত। 

ঘুমের মধ্যে হাসার কারণ
মানুষ বেশ কিছু কারণে ঘুমের মাঝে হাসে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো- 
স্বপ্ন: ঘুমের একটি স্তর আছে যাকে বলে র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (আরইএম), এই সময়েই স্বপ্ন সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। স্বপ্নে আনন্দদায়ক বা হাস্যকর কিছু ঘটলে, আমাদের মস্তিষ্ক সেই অনুভূতির প্রতিক্রিয়ায় হাসির সংকেত পাঠাতে পারে, যেটি শরীর দিয়ে প্রকাশ পায়।
প্যারাসমনিয়া: এটি এক ধরনের ঘুমের ব্যাধি, যেখানে ঘুমের মধ্যে বিভিন্ন অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়, যেমন হাঁটা, কথা বলা বা হেসে উঠা। কখনো কখনো আরইএমের সময় শরীরের প্যারালাইসিস ঠিকভাবে কাজ না করলে এমন হাসির আচরণ দেখা যায়।
স্নায়ুবিক অসুস্থতা: পারকিনসনস ডিজিজ, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা ব্রেন টিউমারের মতো কিছু জটিল নিউরোলজিক্যাল অসুস্থতাতেও ঘুমের মধ্যে হাসি হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে হাসি সাধারণত স্বপ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত না হয়ে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যকলাপের কারণে হয়।
জেলাস্টিক সিজার: এটি একটি বিরল ধরনের মৃগী, যেখানে হঠাৎ অপ্রতিরোধ্য হাসির সিজার হয়। এমনকি ঘুমের মধ্যেও। সাধারণত এটি হাইপোথ্যালামাস বা টেম্পোরাল লোবে সমস্যা হলে ঘটে।
মানসিক চাপ বা উদ্বেগ: অনেক সময় মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা ট্রমা-সম্পর্কিত স্বপ্নের প্রভাবে ঘুমের মধ্যে হাসি দেখা দিতে পারে। এটি ঘুমের গুণমানেও প্রভাব ফেলতে পারে।

smile-1

শিশুরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কেন হাসে
শিশুরা সাধারণত আরইএমে অনেক বেশি সময় কাটায়, যেখানে তারা স্বপ্ন দেখে বা মস্তিষ্কের বিকাশ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি স্নায়ুবিক বিকাশের একটি স্বাভাবিক অংশ এবং চিন্তার কিছু নেই। এমনকি অনেক সময় হাসি কোনো স্বপ্নের প্রতিক্রিয়া নয়, বরং স্বতঃস্ফূর্ত স্নায়বিক ক্রিয়া হতে পারে। তবে যদি শিশুর হাসির সঙ্গে অস্বাভাবিক দম নেওয়ার ধরণ বা খিঁচুনি দেখা যায়, তখন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি একেবারেই স্বাভাবিক। শিশু ও কিশোরদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায় কারণ তাদের আরইএমের ঘুমের পরিমাণ বেশি। তবে যদি ঘন ঘন হাসি হয়, দীর্ঘ সময় হাসতে থাকা। কিংবা ঘুমিয়ে সহিংস আচরণ, যেমন বিছানায় লাফানো বা হাত-পা ছোড়াছুড়ি করা তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ এ সমব কিছুই অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে।

চিকিৎসা ও করণীয়: 
চিকিৎসা নির্ভর করে মূল কারণের ওপর:
জেলাস্টিক সিজার হলে সাধারণত অ্যান্টি-সিজার ওষুধ দেওয়া হয়।
চাপ বা মানসিক স্বাস্থ্যজনিত কারণ হলে সাইকোথেরাপি বা কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি কার্যকর হতে পারে।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন – ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল কমানো, নিয়মিত ঘুমের রুটিন, এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট – ঘুমকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত সাবধানতার প্রয়োজন হতে পারে যদি ঘুমের সময় সহিংস আচরণ দেখা দেয়. তখন প্যাডেড বেড রেল, অথবা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া ভালো।
ঘুমের মধ্যে হাসা অধিকাংশ সময়ই মজার এবং স্বাভাবিক একটি ঘটনা। তবে এটি যদি ঘন ঘন হয়, বা অস্বাভাবিকতা দেখা যায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।