বর্তমান যুগে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শিশুদের শিক্ষাজীবন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি বেড়েছে তাদের স্ক্রিন টাইম বা স্মার্টফোনে কাটানো সময়। মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ এসব এখন অনেক শিশুর নিত্যসঙ্গী। তবে প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারে শিশুদের একাগ্রতা কমে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে মানসিক চাপ ও শারীরিক সমস্যা।
চিকিৎসক ও শিশু মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সচেতনভাবে কিছু নিয়ম মেনে চললে শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি কমানো সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু কার্যকরী উপায়-
বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব
শিশুকে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছয় মাস বয়স থেকেই উপযুক্ত কাপড়ের তৈরি বই, রঙিন ছবি ও গল্পের বই তাদের হাতে তুলে দিন। গল্প পড়ে শোনান। এতে করে তারা ধীরে ধীরে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকবে এবং বইয়ের দুনিয়ায় আগ্রহ জন্মাবে।
Child2
নিয়মিত শরীরচর্চা ও খেলাধুলা
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে অন্তত ১ ঘণ্টা খেলাধুলা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক। কিন্তু মোবাইলের প্রতি আসক্তি তাদের মাঠছাড়া করে দিচ্ছে। অভিভাবকদের উচিত সন্তানকে বাইরে খেলাধুলায় উৎসাহ দেওয়া, পার্কে বা ছাদে সময় কাটানো নিশ্চিত করা।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা
৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের প্রতিদিন ৯-১২ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। স্ক্রিনের অতিরিক্ত ব্যবহারে ঘুমের সময় ব্যাহত হয়, যা শিশুর মনঃসংযোগ কমিয়ে দেয়। নির্দিষ্ট ঘুমের সময় মেনে চলার অভ্যাস করাতে হবে, এবং রাতে ঘুমের আগে ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে হবে।
Child4
অভিভাবকদের নজরদারি
শিশুরা কী দেখছে, কতক্ষণ দেখছে সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে-
- পড়ার সময় মোবাইল নিষিদ্ধ করুন
- শোবার ঘরে কোনো স্ক্রিন না রাখার নিয়ম চালু করুন
- পরিবারে স্ক্রিন ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন
- এ ধরনের নিয়ম ছোটদের মানসিক চাপ কমায় এবং মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করে।
সামাজিক মেলামেশার সুযোগ দিন
বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা, পারিবারিক মেলামেশা, ছবি আঁকা, গান শেখা বা লেখালেখির মতো সৃজনশীল কাজে শিশুদের সম্পৃক্ত করুন। চিকিৎসকদের মতে, সামাজিক যোগাযোগ ও শখের চর্চা শিশুর বুদ্ধি ও একাগ্রতা বাড়ায়।
Child3
বাড়ির কাজে অংশ নিতে উৎসাহ দিন
রান্না, ঘর গোছানো বা খেলনার জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার মতো ছোট ছোট কাজে শিশুদের যুক্ত করুন। এতে তারা ব্যস্ত থাকবে, নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস গড়ে উঠবে, এবং স্ক্রিন টাইম স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে।
বড়দের আচরণে সচেতনতা জরুরি
বাড়ির বড়রা যদি সারাক্ষণ মোবাইল বা টিভি স্ক্রিনে ডুবে থাকেন, তাহলে শিশুরাও সেটা অনুসরণ করে। তাই অভিভাবকদের উচিত নিজেদের স্ক্রিন টাইম কমিয়ে শিশুদের সামনে একটি ইতিবাচক উদাহরণ তৈরি করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তি পুরোপুরি বন্ধ না করে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের মনে জোর করে কিছু চাপিয়ে না দিয়ে তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে বিকল্প পথ দেখানোই হতে পারে আসক্তি দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।