আমাদের মধ্যে অনেকেরই নানা রকম বদভ্যাস থাকে। তবে কিছু বদভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সেরকমই একটি হলো- ধুমপান। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ধুমপানের আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছে অত্যন্ত শক্তিশালী। ফলে চাইলেও ধুমপানের অভ্যাস ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়ন করা যথেষ্ট কঠিন হয়ে পড়ে। আসলে এই অভ্যাস ত্যাগের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করতে কিছু সহজ পদ্ধতি ও উপায় রয়েছে। মনে রাখবেন, আপনি যখনই চিন্তা করলেন ধুমপান ত্যাগ করবেন, তখনই আপনি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একধাপ এগিয়ে গেলেন।
ধুমপানের তাড়নাকে কীভাবে প্রশমন এবং প্রতিরোধ করা যায় তাই জানিয়েছেন, বেঙ্গালুরুর ফোর্টিস হাসপাতালের সিনিয়র ডিরেক্টর ডা. নীতি রাইজাদা। সেই আলোচনা থেকেই চলুন জেনে নেই কিছু টিপস।
একটির বেশি নয়
ধুমপান ত্যাগ করা খুবই কঠিন। এই অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য শক্তিশালী মনোবল প্রয়োজন। আপনি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন যে আজ কোনোভাবেই ধুমপান করবেন না বা একটির বেশি অবশ্যই নয়। এই প্রতিজ্ঞা ধরে রাখুন যতদিন ধুমপান থেকে মুক্ত না হতে পারেন।
অনুপ্রেরণা খুঁজুন
সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের সকল বদঅভ্যাস ত্যাগের মূলে থাকে অনুপ্রেরণা। আপনি খোঁজার চেষ্টা করুন কোন বিষয়গুলো আপনাকে ধুমপান ত্যাগ করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। যেমন আপনি আপনার সন্তানের কাছে নিশ্চয় একজন ধুমপায়ী পিতা হতে চান না? আপনি নিশ্চয় চান না, ধুমপানের কারণে আপনার পরিবারের সদস্যরাও পরোক্ষভাবে এই বিষে আক্রান্ত হোক? তাহলে এই চিন্তাকে প্রেরণা হিসাবে নিন এবং ধুমপান থেকে মুক্ত করতে সচেষ্ট হোন।
বাঁধাগুলোকে শনাক্ত করুন
কিছু পরিস্থিতি বা কার্যকলাপ আপনাকে ধুমপানে আগ্রহী করে তুলতে পারে। যেগুলো এই অভ্যাস ত্যাগে বাঁধা হতে পারে। যেমন মানসিক চাপ, একঘেঁয়েমি, ধুমপায়ী বন্ধুদের সাথে মেলামেশা ইত্যাদি। এখন থেকে আপনার কাজ হলো এসব বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলার কৌশল রপ্ত করা।
উৎসাহ নিন
একা একা ধুমপান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে অনেক সময় দ্বিধা থাকে। তাই আপনি ধুমপান ত্যাগ করতে চান এই সিদ্ধান্তের জন্য বন্ধু, সহযোগী ও অন্যান্য শুভাকাঙ্ক্ষীদের উৎসাহিত করুন। আপনার মতোই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এমন মানুষের সাথে চলার চেষ্টা করুন। ধুমপান ত্যাগের প্রথমদিকে আপনি উত্তেজিত থাকতে পারেন, এক্ষেত্রে উত্তেজনা কমাতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ।
নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
ধুমপান মূলত হাত ও মুখের একটি অভ্যাস। সেজন্য নিজের হাতকে ব্যস্ত রাখা জরুরী। আপনি একটা স্ট্রেস বল নিয়ে সবসময় চাপতে পারেন, গেম খেলতে পারেন, লেখালেখি করতে পারেন। এগুলো আপনাকে ব্যস্ত রাখতে সহায়তা করবে।
নিজেকে পুরস্কৃত করুন
ধুমপান ত্যাগ করতে পারা একটি বিরাট অর্জন। তাই নিজেকে পুরস্কার দিতে ভুলবেন না। নতুন পোশাক কিনতে পারেন বা ভালো কোন রেষ্টুরেন্টে নিজেকে ট্রিট দিতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখবেন যে এমন কিছু যেন না ঘটে যাআপনাকে পুনরায় ধুমপানে আগ্রহী করতে পারে।
হাল ছাড়বেন না
ধুমপান ত্যাগের ক্ষেত্রে অনেক বাঁধা আসতে পারে। তবে হাল ছাড়া যাবে না। নিজের ভুলের জন্য ধুমপান করে শাস্তি দিবেন না। অন্য কোনো উপায় বের করুন এবং ধুমপান মুক্ত হয়ে থাকার চেষ্টা করুন।
মনে রাখবেন, সুস্থতার দিকটি বিবেচনা করলে ধুমপান ত্যাগ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধুমপান ত্যাগ মানেই আনন্দ ত্যাগ করা নয়। কারণ এই আনন্দ আপনাকে একসময় বিষাদগ্রস্তই করবে। ফলে নির্ভেজাল আনন্দ লাভের উৎসগুলো খুঁজে বের করুন। খেলাধুলা, বই পড়া, ঘুরতে যাওয়া, আপনজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে নিজেকে আনন্দিত রাখুন।