কারাগারের ইমরান খান বেশি শক্তিশালী

পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে চমক দেখালেও তাদেরকে বসতে হচ্ছে বিরোধী দলের চেয়ারে। পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে সেনাবাহিনী ও তাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কুটচালে জেলবন্দি থাকতে হচ্ছে। তবে বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় যেতে না পারলেও রাজনীতিবিদ হিসেবে জয় হয়েছে ইমরান খানের। তিনি যেন আগুনে পুড়ে খাঁটি হয়েছেন। ক্রিকেট মাঠের ২২ গজের মতোই ভেলকি দেখিয়ে চলেছেন।

সব শেষে পাকিস্তানের ২৪তম প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন পিএমএল-এনের শাহবাজ শরীফ, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের আপন ভাই। গত ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এমন একটি সরকার গঠন হয়েছে, যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হয়েছে কয়েকটি দল মিলে। অনেকে এটিকে নড়বড়ে সরকার বলে উল্লেখ করা শুরু করেছেন।

পাকিস্তানে এবারও নির্বাচনে সামরিক বাহিনী তাদের পুরোনো নির্বাচনী খেল দেখিয়েছে। অতীতে সফলভাবে কাজে লাগানো প্রতিটি কৌশলই প্রয়োগ করেছে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক ফৌজদারি ও দেওয়ানি অভিযোগ আনা হয়। সব অভিযোগই তিনি অস্বীকার করেছেন। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে ইমরান খানকে তিনটি মামলায় সাজা দেওয়া হয়। 

পিটিআইয়ের অনেক প্রার্থী নিজ নিজ আসনে নির্বাচনী প্রচারের পরিবর্তে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান এড়াতে পালিয়ে বেড়ান। বিপরীতে ইমরানের বিরোধীদের অনেক মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়। তারা নির্বাচনী প্রচারে অবাধ সুযোগ পান। এরপরও নির্বাচনে আশার চেয়ে বেশি ফল দেখিয়েছেন পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

বিভিন্ন রকম বাধার মুখেও দমে যায়নি ইমরানের সমর্থকেরা। নির্বাচনে অসাধারণ খেল দেখিয়েছেন তারা। রাতারাতি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, অ্যাপ ও ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন। তারা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছেছেন এবং নিজেদের প্রার্থীদের খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি কারাবন্দী ইমরান খানের বক্তব্য প্রচার করে পিটিআই। ইমরানের কয়েদি নম্বর নির্বাচনী স্লোগানে পরিণত হয়। তার অনুসারীরা গেরিলা ধাঁচের প্রচারণা চালান এবং নির্বাচনের দিন চমক সৃষ্টি করেন।

নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ সত্ত্বেও পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হন। নির্বাচনের দিন ইমরানের জনপ্রিয়তার ঢেউ এতটাই আছড়ে পড়েছিল, যা যথারীতি কারচুপি সত্ত্বেও আটকানো যায়নি। প্রযুক্তিবান্ধব একটি প্রজন্মকে নিয়ন্ত্রণ করতে সামরিক বাহিনী বিংশ শতাব্দীর কৌশল ব্যবহার করেছিল, কিন্তু তারা হেরে যায়।
 
এরই মধ্যে আপোষহীন নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন ইমরান খান। ক্ষমতার পেছনে ছোটাছুটি করেননি তারা। নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরও ইমরানের বিরোধীরা সরকার গঠনে আগ্রহ দেখায়নি। প্রথমবারের মতো নেতৃস্থানীয় রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতা দাবি করার পরিবর্তে দায়িত্ব নিতে নারাজ ছিলেন, যা পাকিস্তানের ইতিহাসে বিরল। 

অনেকেরই ধারণা, পাকিস্তানের বাস্তবতায় কারাজীবন ইমরান খানকে আরও পরিপক্ব রাজনীতিবিদে পরিণত করবে। তবে তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। ইমরান নিজেকে আপোষহীন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সামরিক বাহিনীর কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করতে তিনি নিজেকে নমনীয় অবস্থানে নিতে চাইবেন না। রাজনীতির পুরোনো খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে জেদ ইমরানকে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতায় পরিণত করেছে।

পাকিস্তানের এবারের পার্লামেন্ট যেনতেন পার্লামেন্ট হবে না। এবারের পার্লামেন্টে শাহবাজকে সাহসিকতার পরিচয় দিতে হবে। এমনকি তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের বৈধতা প্রশ্নে চ্যালেঞ্জের মধ্যেও পড়তে হতে পারে। তাঁরা ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জনরায় চুরি করে সরকার গঠন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।