টানা উত্তেজনা আর অনিশ্চয়তা শেষে নতুন সরকার গড়ার বিষয়ে একমত হয়েছে নওয়াজ শরীফের পিএমএল ও পিপিপি। ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারার বিষয়ে এতমত হয়েছেন দল দুটির নেতারা। আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরীফ। আর পিপিপির আসিফ আলী জারদারি হতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট।
তবে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট পদের বাইরে বেশি আলোচনা হচ্ছে নওয়াজ কন্যা মরিয়মকে নিয়ে। পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে সাত দশকের পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী হবেন মরিয়ম নওয়াজ।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে পাঞ্জাবের একটি আসন থেকে জয়লাভ করেন মরিয়ম নওয়াজ। কেন্দ্র ও প্রদেশগুলোয় জোট সরকার গঠন নিয়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টি-পিপিপি ও পিএমএল-এনের টানা কয়েক দিনের আলোচনার পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। এরপর পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদে পিএমএল-এন থেকে মরিয়মকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
১৯৭৩ সালে জন্ম নেওয়া মরিয়ম পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের মেয়ে। ২০১২ সালে মরিয়ম তার বাবার দল পিএমএল-এনএ যোগদান করেন। ২০১৩ সালের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে তার বাবা নওয়াজ শরীফের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন মরিয়ম। এরপর থেকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত হয়ে উঠতে থাকেন তিনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন মরিয়ম।
চিকিৎসক হতে চাইতেন মরিয়ম। তিনি লাহোরের কিং এডওয়ার্ড মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু ওখানে তার মন টেকেনি। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে মরিয়মের বয়স যখন ১৯ তখন তার পিতা নওয়াজ শরীফ তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন সফদfর আওয়ানের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের পরে সফদfর সামরিক চাকরি ছেড়ে দেন। মরিয়ম পরে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, লাহোর থেকে অনিয়মিত ছাত্রী হিসেবে পড়াশোনা করে ২০১২ সালে ডিগ্রি নেন।
তিন সন্তানের জননী ৫০ বছর বয়সী মরিয়ম বর্তমানে পিএমএল-এনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান সংগঠক। বাবা নওয়াজ শরীফের উপস্থিতিতে চাচা শেহবাজকে নিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখায় মরিয়মের ভূমিকা ছিল অনন্য। এর ফল পেতে যাচ্ছেন তিনি। নওয়াজ শরীফের যোগ্য উত্তরসূরি মরিয়মই হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হলে মরিয়মের কাঁধে পড়বে পাঞ্জাবের ১২ কোটি ৭০ লাখ মানুষের দায়িত্ব। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষই এই প্রদেশের বাসিন্দা। মরিয়ম নওয়াজ তার দলের পক্ষে ভোট দেওয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আপনাদের আস্থা ও সমর্থনই আমার প্রকৃত সম্পদ। জনগণের যাতে সর্বোত্তম উপায়ে সেবা করতে পারেন, সে জন্য দোয়া চান মরিয়ম। তার নেতৃত্বে পাঞ্জাব প্রদেশে নতুন যুগের সূচনা হবে বলেও আশাবাদ প্রকাশ করেন।
প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্মান দেশের প্রতিটি মা, মেয়ে ও বোনকে উৎসর্গ করতে চান মরিয়ম নওয়াজ। পাঞ্জাব শাসনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মরিয়ম নওয়াজ বলেন, সরকার ও দলীয় পর্যায়ে কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সে জন্য পৃথক একটি রূপরেখা তৈরি করেছে তার দল।
