মুরগি-মাছ আর চালের দামে হাঁসফাঁস, ডিমে স্বস্তি

রাজধানীর বাজারে কয়েক সপ্তাহ ধরে নিত্যপণ্যের দামে লাগামছাড়া ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। সবজি, মাছ, চাল, মুরগি প্রায় সবখানেই দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রায়। তবে কিছুটা স্বস্তির খবর ডিমের দাম কমেছে সামান্য।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু ছাড়া কোনো সবজিই ৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। গোলাকৃতি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০–১৪০ টাকা কেজি, বরবটি, করলা, চিচিঙ্গা ও কচুর লতি ১০০–১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ধুন্দল ও ঝিঙ্গার কেজি ৮০–১০০ টাকা, পটল ও ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা, আর পেঁপে ৩৫–৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু আলুর দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে মিলছে ২৫–৩০ টাকা কেজিতে।

শাকসবজির দামও আকাশছোঁয়া। লাল শাক, কলমি বা হেলেঞ্চা শাকের আঁটি ২০ টাকা হলেও, পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ৪০–৫০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে এখন ১৮০-২০০ টাকা। এর আগে এটি ছিল ১৭০-১৮০ টাকা।

হাজিপাড়া বউ বাজারের মুরগি বিক্রেতা আবু সাইদ আহমেদ বলেন, সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বেড়েছে, তাই দামেও প্রভাব পড়েছে। তবে ২০০ টাকা পর্যন্ত মুরগির দাম এখনও স্বাভাবিক বলা যায়।

ডিমের বাজারে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে। ব্রয়লার ডিম (লাল) ডজনপ্রতি ১৪০ টাকায় নেমে এসেছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০ টাকা। সরবরাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

মাছের দামেও ব্যাপক উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খাল-নদী ও সামুদ্রিক মাছের দাম কেজিপ্রতি ৫০–১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত মূল্য নিয়ন্ত্রণে তদারকি দুর্বল হওয়ায় প্রতি সপ্তাহেই নতুন করে চাপ তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে বিক্রেতাদের দাবি, সরবরাহ খরচ ও পাইকারি দামে ঊর্ধ্বগতি থাকায় খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।

বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী

  • কোরাল: ৮০০–৯০০ টাকা
  • আইড়: ৬০০–৭৫০ টাকা
  • বড় চিংড়ি (বাগদা/গলদা): ৭৫০–১২০০ টাকা
  • ছোট চিংড়ি: ১০০০–১২০০ টাকা
  • রুই/কাতলা: ৩৫০–৫৫০ টাকা
  • শিং: ৪০০–৫০০ টাকা
  • টেংরা: ৬০০–৭০০ টাকা
  • পুঁটি: ২০০–২৫০ টাকা
  • তেলাপিয়া: ২৫০–৩০০ টাকা
  • নাইলোটিকা: ২২০–২৮০ টাকা
  • কৈ: ২০০–২২০ টাকা
  • পাঙাস/সিলভার কার্প: ২৫০–২৮০ টাকা

বিশেষ করে দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের চাষের রুইয়ের দাম ৫৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।

চালের দাম গত দুই সপ্তাহে সামান্য হ্রাস পেলেও বাজার এখনো চড়া।

বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মানভেদে

  • মিনিকেট: ৭২–৮৫ টাকা
  • নাজিরশাইল: ৭৫–৯৫ টাকা
  • ব্রি-২৮: ৬২ টাকা
  • স্বর্ণা (মোটা চাল): ৫৮–৬০ টাকা

ক্রেতারা বলছেন, দাম যতটা কমার কথা, বাস্তবে তা হচ্ছে না।

নিত্যপণ্যের এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অনেকেই বলছেন, প্রতিদিন বাজারে গিয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছে গড়ে ২০০–৩০০ টাকা পর্যন্ত। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বারবার বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারির আহ্বান জানিয়ে এলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।