বর্তমান বাজারে মাছ, মাংস, শাকসবজির অগ্নিমূল্য। গরিব বা নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে গরু, ছাগলের মাংস। মুরগিরও কখনো কখনো দাম বাড়ে। মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী। তবে এখনো ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থেকে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছে ডিম।
বাজারে বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে পাঁচ দিন আগে। এখন নতুন দরেই সব দোকানে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। তেলের সঙ্গে বাড়তি রয়েছে পুরোনো পেঁয়াজের দামও।
প্রকৃতিতে শীতের দেখা মিলার সঙ্গে বাজারে দেখা মিলেছে মৌসুমি সবজির প্রাচুর্য। কিন্তু এই প্রাচুর্য যেন এক অলীক স্বপ্ন—কারণ দামের পারদ নামছেই না! ফুলকপি, শিম, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ঝিঙা, গাজর-সবই এখন সাজানো রয়েছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। কিন্তু এই প্রাচুর্যের মাঝেও কমেনি দামের চাপ, যা ভোক্তাদের জন্য বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজি থেকে শুরু করে মাছ, মাংস—সবকিছুর দামই চড়া। পাইকারি বাজারে সামান্য তারতম্য এলেও খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়ছে না, ফলে অতিরিক্ত দামেই পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।
এদিনের বাজার ঘুরে জানা যায়, বেশিরভাগ সবজির দাম এখনো প্রতি কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্যদিকে, মাছের দামেও কোনো স্বস্তি নেই।
মাঝারি আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও, বেগুন, গাজর, শসা, কাঁচা মরিচ এবং নতুন আলু প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও, ঝিঙা ও শিম ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং বরবটি ও করলা ১০০ টাকার ঘরে রয়েছে।
অন্যদিকে, মাছের বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ (মাঝারি) ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা এবং বড় চিংড়ি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এই চড়া দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের বাজেটের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে।
এদিকে বয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালী ২৮০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা আমিল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, শীত আসলে সবজির দাম কমে যাওয়ার কথা, কিন্তু এবার উল্টো। দাম বেশি হওয়ায় আগে যেসব সবজি এক কেজি করে কিনতাম, এখন তার অর্ধেক কিনতে হচ্ছে। পরিবারের বাজেট সামলানো কঠিন।
মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা শহিদুল ইসলামের ভাষ্য, বছরের সব সময় ধরেই মাছের দাম খুব বেশি থাকে। এত বেশি দামে মাছ কিনে খাওয়া সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে কষ্টসাধ্য।
অন্যদিকে, বিক্রেতারা বলছেন সরবরাহ ঘাটতি এবং পরিবহন ব্যয়ের কথা। মালিবাগ বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আসাদ আলী জানান, পাইকারি বাজারেই সরবরাহ কম, ফলে আমরা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শীতের শুরুতেই সবজির বাজার চড়া থাকায় ক্রেতাদের খরচ বেড়ে গেছে। মৌসুমি সবজি উঠলেও সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনা এবং নির্বিঘ্ন সরবরাহ নিশ্চিত না হলে এই উচ্চমূল্যের চাপ ভোক্তাদের বয়ে বেড়াতেই হবে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই উচ্চমূল্যের চাপ রয়ে যাবে।
