বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক, এটা ভারত চায় না বলে বলে মন্তব্য করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেছেন, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত হবে, যা ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী। আর এ কারণেই প্রতিবেশী দেশটি (ভারত) বাংলাদেশে অস্থিরতা বজায় রাখতে আগ্রহী।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ইলেকশন ওয়ার্কিং অ্যালায়েন্স ও ফেয়ার ইলেকশন অ্যাডভাইজরি কমিটি আয়োজিত ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ভারতীয় আগ্রাসন মোকাবিলা করাকে বাংলাদেশের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘তারা চায় না বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। আমি অনেকবার বলেছি এটা নিয়ে অনেক সময় জুলাই যোদ্ধারা আমাকে ভুল বুঝেছে। আমি বলতাম যে বাংলাদেশে একটা ফ্রি-ফেয়ার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে।’
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন হয়ে গেলে এবং সত্যি সত্যি যদি জনগণের অভিপ্রায় এতে প্রতিফলিত হয়, তাহলে পরে সেই সরকারের সময় বাংলাদেশে ভারতীয় অপকর্মগুলো করা কঠিন হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিকভাবেও ভারত এর মধ্যে চাপে পড়বে। কাজেই বাংলাদেশে যদি একটা অস্থিরতা থাকে, তাহলে ভারতের জন্য সুবিধা।
অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘বয়স্ক হলেও অনভিজ্ঞ’ উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি একজন লিডারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সিদ্ধান্ত নেওয়া। সিদ্ধান্ত নিলে আপনার ভুল হতে পারে, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই সরকার যেন অনেকটা এরকম মনোভাব– আচ্ছা দেখি না, সময় চলে যাক, টাইম ইজ বেস্ট হিলার।’
আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর দলগুলোর মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে বলে আশা করলেও এখনো সবাই পুরোনো সংকীর্ণ চিন্তাধারার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। একে তিনি ‘জাতির দুর্ভাগ্য’ হিসেবে অভিহিত করেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার আদায়ের জন্য নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘সিটিজেন চার্টার’ দেওয়ার জন্য বলতে হবে। সেখানে দলগুলো অঙ্গীকার করবে যে তারা নির্বাচনে জাল ভোট দেবে না বা কেন্দ্র দখল করবে না। শেখ হাসিনার পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা না নিলে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ঠাঁই হবে।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন– অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. গোলাম রহমান ভুঁইয়া, সাবেক সিনিয়র সচিব ড. খ. ম কবিরুল ইসলাম এবং ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন।
এছাড়া আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরীন সুলতানা মিলি ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
