ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

অযত্ন ও তদারকির অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে হাতিরঝিল

আপডেট : ০৭ মে ২০২৪, ০৬:১৮ পিএম

ঢাকার নাগরিক জীবনের নানা জঞ্জাল থেকে সাময়িক স্বস্তি পেতে রাজধানীর বাসিন্দারা ছুটে যান হাতিরঝিল লেকে। প্রতিদিনই নাগরিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে কিংবা নির্মল বায়ুতে শ্বাস নিতে আসেন নানান বয়সী মানুষ। হাতিরঝিলের সৌন্দর্য ও নির্মাণশৈলীর নতুনত্ব নগরবাসীকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তবে বর্তমানে অযত্ন, অবহেলায় ও সঠিক তদারকির অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে হাতিরঝিল প্রকল্প। আগে ছুটির দিনগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও এখন সেটি কমে আসছে। এজন্য সংশ্লিষ্টরা তদারকি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন।

সরেজমিনে রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পের আওতাধীন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, লেকের পাশে ওয়াকওয়ে ধরে টব থাকলেও অধিকাংশ টবেই গাছ নেই। টবগুলো আবর্জনা দিয়ে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। এছাড়া হাতিরঝিলের বিভিন্ন স্থানে ওয়াকওয়ের স্লাব সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যেকোনো সময় দুঘর্টনায় পড়তে পারেন পথচারীরা। অন্যদিকে বেশ কয়েকটি ড্রেনের ওপর লোহার গ্রিল খুলে নিয়ে গেছে ভবঘুরে আর মাদকাসক্তরা। এছাড়াও স্টিলের খাঁচা, তারকাঁটার বেড়াসহ মূল্যবান জিনিসপত্র প্রতিনিয়ত খোয়া যাচ্ছে। এতে করে সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি তদারকির অভাবে কার্যত অচল হয়ে পড়ছে এই দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প।

এ ছাড়া অযত্নে মারা যাচ্ছে অসংখ্য বিদেশি দামি গাছ। সৌন্দর্য বাড়াতে অনেক টাকা খরচ করে ঘাস লাগানো হলেও তা এখন নেই। হাতিরঝিলের ভ্রাম্যমাণ ও স্থায়ী দোকানের ক্রেতাদের জন্য বসার জায়গা করতে সৌন্দর্য বাড়ানো সবুজ ঘাসের ওপর রাখা হয়েছে চেয়ার-টেবিল। অনেকেই ত্রিপল, ছাতা আর চেয়ার, টেবিল দিয়ে বরাদ্দের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি জায়গা দখল করে রেখেছে। কয়েকটি স্থানে ময়লা ফেলার ড্রাম চুরি হয়ে গেছে। কিছু ড্রাম থাকলেও পাশেই জমে উঠেছে ময়লার স্তূপ। 

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় কম থাকলেও বিকেল চারটার পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে, যা মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে‌। অন্যদিকে দর্শনার্থীদের পাশাপাশি হকারদের ভিড়ও দিন-দিন যেন বেড়েই চলেছে। অনেক হকার ফুটপাত ও ওয়াকওয়ে দখল করে কেনাবেচা করেন। 

দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। কয়েকটি স্থান ছাড়া অধিকাংশ স্থানেই নিরাপত্তা কর্মীদের খুব একটা দেখা যায় না। সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের আনাগোনাও বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন হাতিরঝিলের আশপাশের এলাকার অধিবাসীরা। তাছাড়া, ভবঘুরে ও পথশিশুদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পড়তে হয় পথচারী ও দর্শনার্থীদের। রাতে জ্বলে না ল্যাম্পপোস্টের বেশকিছু বাতি। ফলে সেইসব স্থানে মাঝেমধ্যেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

 

এফডিসি মোড়, বেগুনবাড়ী লেকপাড়, গুদারাঘাট, নিকেতন ও রামপুরা এলাকার আবাসিক বাসাবাড়ির গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনা, পয়োঃবর্জ্য, দর্শনার্থীদের ফেলা বিভিন্ন খাবারের উচ্ছিষ্ট, চানাচুর ও চিপসের প্যাকেট, পানির বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা লেকের পানিতে ভাসছে। সর্বমোট ১১টি পয়েন্ট দিয়ে এসব ময়লা পানি ও পয়োঃবর্জ্য হাতিরঝিলে প্রবেশ করে নষ্ট করছে পানির স্বচ্ছতা। এতে বাতাসের সঙ্গে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ঝিলপাড় ও আশপাশ এলাকায়। ময়লা পানির ঘনত্বে ঢেউয়ে সৃষ্টি হচ্ছে সাদা ফেনা।

হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশিকুর রহমান (৩২) দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, ঢাকায় খালার বাসা রামপুরায় বেড়াতে এসেছি। এর আগেও আমি হাতিরঝিল এসেছি। কিন্তু, এবার এসে দেখলাম অনেক ফুল গাছ মরে গেছে বা নেই। এগুলো যত্ন করলে ভালো হতো ।

রাজধানীর গ্রীনরোড এলাকার বাসিন্দা শফিকুল আলম দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, আামি প্রায়ই অবসর সময়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে আসি। কিন্তু আগের মতো হাতিরঝিলে নির্মল বাতাস পাই না। মাঝেমাঝেই বাতাসে দুর্গন্ধ টের পাই। হাতিরঝিলের যত বয়স হচ্ছে, ততই যেন এর সৌন্দর্য কমে যাচ্ছে ।

রামপুরা মধুবাগ এলাকার বাসিন্দা সোহেল ও ফারিয়া দম্পতি সন্তান নিয়ে এসেছেন হাতিরঝিল দেখতে। সোহেল বলেন, হাতিরঝিলে আগে আসলে অন্যরকম ভালো লাগতো। এখন মাদকসেবী আর ভবঘুরে মানুষের আনাগোনা অনেক বেশি। ভালো সময় কাটাতে আসলেও তাদের জন্য নানা সমস্যায় পড়তে হয় ।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিথিলা আহমেদ দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, সন্ধ্যায় মধুবাগ এলাকায় টিউশনি করাতে যাই। ঝিলপাড়ে ওয়াকওয়েতে অনেক জায়গায় লাইট নষ্ট থাকায় ভয় নিয়ে চলতে হয়। আগের মতো হাতিরঝিলে চলাচলে স্বস্তি পাই না।

তেজগাঁও কলোনি বাজার এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আমিনুল ইসলাম দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, প্রতিদিন বিকেলে একটু হাঁটতে বের হই। কিন্তু অনেক জায়গায় ওয়াকওয়ে ভেঙ্গে গেছে। এতে হাঁটতে ভয় লাগে। তাছাড়া অনেক ল্যাম্প নষ্ট।  এগুলো জরুরীভাবে ঠিক করা উচিত।

উল্লেখ্য ,২০০৭ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) হাতিরঝিল প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্প ব্যয়ের এক হাজার ৯৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মধ্যে বাস্তবায়নকারী সংস্থা রাজউকের এক হাজার ১১৩ কোটি সাত লাখ, এলজিইডির ২৭৬ কোটি এবং ঢাকা ওয়াসার ৮৬ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা রয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন এবং তদারকি করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (এসডব্লিউও)। বর্তমানে হাতিরঝিলের ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

AS/WA
আরও পড়ুন